দুইটা ঘটনা চোখে পড়ল। প্রথমটা শারিরীক প্রতিবন্ধী রিক্স চালক রফিকুল ইসলামের। লকডাউনে বাসায় খাবার নেই। তিন বেলার যায়গায় একবেলাও খাবার জুটছে না। বাধ্য হয়ে বের হয়েছেন রিক্সা নিয়ে। ওয়াজঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন কাকরাইল। মাঝে লকডাউনে বের হওয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে ১২০০ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু সারাদিনে তিনি আয়ই করেছেন ১৫০ টাকা। জরিমানা না দিতে পারলে কিস্তিতে কেনা তার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন রিক্সাখানা ভেঙে নিয়ে যাবে। তারপর? তারপর কি হবে? তিনি বাঁচবেন কিভাবে? তার পরিবারেরই বা কি হবে? সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনেদিয়া?" চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে একটি কথাই বলছেন- “রোগ তো আমার একলার লাইগা না। রোগ তো সবার লাইগাই। রোগ না হয় মানুম। কিন্তু পেট মানুম কি দিয়া?”
দ্বিতীয়টা বরিশাল লঞ্চঘাটের এক পথশিশুর। আগে লঞ্চে পানি, চকলেট বিক্রি করে খাবার জুটতো। কিন্তু লক ডাউনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় উপার্জন বন্ধ। বাধ্য হয়ে তিন বেলার পরিবর্তে একবেলা করে থেকে হচ্ছে। সেটাও অনিশ্চিত। লঞ্চঘাটের পাশে নদীতে মাছ ধরে ২-৪ টা যা মাছ পায় সেগুলো পাশের একটা হোটেলে দিয়ে দেয়। বিনিয়মে জুটে একবেলার খাদ্য। পেশাদার জেলে না হওয়ায় মাছ পাওয়ার সম্ভাবনাও সবসময় থাকে না। যেদিন মাছ পায় সেদিন একবেলা খাবার জোটে, যেদিন পায় না সেদিন উপোস।
ঠিক এই কারণেই পুঁজিবাদকে আমার এতটা ঘৃণা হয়। একদিকে একদল মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছে অন্যদিকে একশ্রেনীর মানুষ এত অর্থের মালিক যে অর্থ একজন মানুষের সমস্ত জীবনও গুনে শেষ করার জন্য যথেষ্ট নয়। শুধুমাত্র আমেরিকার বিলিয়নাররা গতবছর লকডাউনে উপার্জন করেছে ৪৩৪ বিলিয়ন ডলার যার মধ্যে অ্যামাজনের জেফ বেজোজ উপার্জন করেছে ৩৪ বিলিয়ন ও ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ ২৫ বিলিয়ন। এই অর্থের অর্থ কি? একজন মানুষের ঠিক কত পরিমান অর্থের দরকার হয়? পরিনতি কি এই অর্থের? তাদের কি মনে হয়?
তারা সমাজ উন্নয়ন করছেন। বিভিন্ন প্রজেক্টে টাকা ঢালছেন। মহাকাশে রকেট পাঠাচ্ছেন। পৃথিবীকে ধ্বংস করে মহাবিশ্বে কোথাও জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যে মানুষটাকে ক্ষুধা পেটে ১৫০ টাকা পকেটে নিয়ে ১২০০ টাকা জরিমানা গুনতে হয় সদ্য পাওয়া ব্লাকহোলের ছবি দেখিয়ে তাকে শান্ত করতে পারবেন না। যে ছেলেটা আজ খেয়ে জানে না আবার কবে পেটে খাবার পড়বে নিউক্লিয়ার প্লান্টের গুরুত্ব বুঝিয়ে আপনি শান্ত করতে পারবেন না।
দেশের কথা না বলে সমস্ত পৃথিবীর কথা বলছি কারণ দেশটাকে আমরা যাদের হাতে তুলে দিয়েছি তাদের আমরা কখনও ক্ষমা করতে পারবো না। এখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে খিচুড়ী রান্না শিখতে পাঠানো হয় কিন্তু ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে থাকা মানুষের জন্য একপ্লেট খিচুড়ীর ব্যবস্থা করা যায় না।
ছবি: RIDHE