ম্যাটারহর্ন ম্যাটার্স

সামনের গিরি শিরায় চোখ রেখে আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশটা নীল, ক্লিওপেট্রার চোখের মত নীল। সে চোখের মাঝে সাদা মনির মত দগদগ করছে ম্যাটারহর্ন। সামিট পিরামিডটা ঢেকে রয়েছে পাতলা মশারীর মত মেঘে। মেঘটা খানিক আগেও ছিলো না। জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময়ের চোখে সেদিকে তাকিয়ে আছি। ভাবিনি আবার কোনদিন পর্বত হাতছানি দিবে, আবার কখনও পাথুরে পথে আমার পদচিহ্ন পড়বে। আমি তো ভেবেছিলাম পর্বত আমাকে ছুঁড়ে ফেলেছে ইট, পাথর আর কংক্রিটের নর্দমায়। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।...

August 23, 2021 · 13 min · সোয়াইব

রুপকুন্ডের রুপ ও একটি হিমালয়ান উপাখ্যান-২

পরদিন ঘুম ভাঙলো একটু বেলা করেই। আজকেই রওনা হয়ে যাবো। বুকজুড়ে অদ্ভুত এক ব্যথা, কাব্যিক এক অনুভূতি, অজানা সেই পথ চলা। দূর আকাশে কল্পনাতে আঁকা প্রেয়সীর মুখ আর অপরিসীম প্রতীক্ষার প্রহর। তবুও সময় হাতের তালু দিয়ে অলক্ষ্যে ঝড়ে যায় বালুর মতন। অপেক্ষা করে বসে থাকলেই চলবে না। সুদীপ্ত-অমৃতা যেহেতু নতুন, ওদের জন্য তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগসহ বেশ কিছু কেনাকাটা করতে হবে। তাছাড়া আমাদের সবারই কিছু না কিছু কিনতে হবে। আর এসবের জন্য ডিক্যাথলনের পরিপূরক কিছু নেই। কলকাতায় ডিক্যাথনের যে শোরুম আছে সেটাও বেশ দূরে। ট্রেন রাত সাড়ে আটটায়, টিকেট পাবো সন্ধ্যা ছয়টায়। আর আগে গিয়ে আসতে হবে।...

December 30, 2018 · 12 min · সোয়াইব

দিল্লিকা মেট্রো

হৃষিকেশ থেকে দিল্লিগামী বাস যখন কাশ্মীর গেট নামিয়ে দিলো তখনও পুরো দিল্লিবাসী ঘুমে অচেতন৷ আধো আধো আলো ফুটতে শুরু করেছে মাত্র৷ সারারাত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসের মধ্যে একটা স্লিভলেস টিশার্ট পড়ে কনকন করেছি। সেই ঠান্ডার নরম অনুভূতিটা এখনও শরীর আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ওয়েদার ফোরকাস্টে দেখেছিলাম দিল্লিতে এখন প্রচন্ড গরম; ‘লু হাওয়া’ বইছে। মরুভূমির বাতাস কোথাও বাঁধাপ্রাপ্ত না হয়ে ঢুকে পড়ছে শহরে, গরমে জনজীবন অতীষ্ট, মানুষ মারা পড়ছে; আরও কত কি! কই আমার তো কিছুই মনে হচ্ছে না। বরং বেশ ঠান্ডা ঠান্ডাই লাগছে৷...

August 18, 2018 · 8 min · সোয়াইব

রুপকুন্ডের রুপ ও একটি হিমালয়ান উপাখ্যান-১

হিমালয়! নামই যার সমস্ত গাম্ভীর্য ধারণ করে আছে, পৃথিবীর সকল উচ্চতম পর্বতগুলোই যে পর্বতমালার অন্তর্গত, সমস্ত আধ্যাত্মিক চেতনাকে সহস্র বছর ধরে কেন্দ্রীভূত করে আসছে যে গিরিশ্রেণী, নিজের রূপ-সূধায় মুগ্ধ করে, আরোহনের প্রলোভন দেখিয়ে হাজারো পর্বতারোহীর জীবন কেড়ে নিয়েছে যে পর্বতমালা, পৃথিবীর তৃতীয় মেরু নামে পরিচিত সেই হিমালয়ের কনকনে শীতল হাওয়া বরাবরই আমার আমার মেরুদন্ড দিয়ে এক শীতল স্রোত সঞ্চারণ করে দেয়। তার প্রতিটি রুক্ষ কঠিন শিলা আমার কৈশরের, আমার যৌবনের তপ্ত অতুভূতিকে তীব্র আঘাত করে আমার চেতনার উপর জমে থাকা মরচেগুলোকে ঝেড়ে ফেলে শিরকে সমুন্নত রাখতে শিখায়। আমি টের পাই তার শুভ্রতার চাদরে আমাকে জড়িয়ে রাখতে চায় জন্মান্তর ধরে।...

June 20, 2018 · 10 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ১০

যাদুর শহরের সব প্রিয় চিরকুটগুলো সোডিয়াম বাতির হলুদ খামে বন্দী করে রেখে এসেছি সেই কবেই। উদ্দেশ্য জীবন থেকে আরেক জীবনে পালিয়ে যাবো। হেটে হেটে বহুদূরের পথ পাড়ি দিয়ে কল্পলোকের রাজ্যে চলে এসেছি, যেখানে পাহাড়ের সাথে মেঘের আবার মেঘের সাথে সূর্যের খুনসুঁটি চলতেই থাকে দিগন্তজুড়ে। এ পর্যন্ত জীবনের সর্বোচ্চ রোমাঞ্চকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। হিমালয়ের হিম ঠান্ডা ঝড়-বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে রওনা হয়েছি স্বপ্নের পথে যেখানে প্রতি পদক্ষেপে এখন বিপদের গন্ধ। যেকোন মুহূর্তে যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে হাইপোথার্মিয়ার মত বিপদের আশংকাও ফেলে দেয়া যায় না।...

February 12, 2018 · 5 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৯

রিক্ত জীবন এখানে জোসনায় পূর্ন হয়ে যায়। সবুজের সাথে পাহাড়ের, পাহাড়ের সাথে মেঘের খুনসুটি চলতেই থাকে। বহু আলোকবর্ষ দূর থেকে সূর্য্যিদেব তার শেষ বিকেলের লালচে আলোকরশ্মি দিয়ে সে মায়াময়তা যেন বাড়িয়ে দেয় আরও বহুগুণে। ফ্লোরা-ফুনা তাদের রূপের পসরা সাজায়। প্রকৃতি কি শান্ত, কি স্নিগ্ধ! বাইরে বের হয়েই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিই। আহ! কি টাটকা বাতাস। হোটেলের সামনেই উঁচু টিলা একটা। এক দৌড়ে উঠে গেলাম চূড়োয়। সামনের রাস্তাযেন স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে রাস্তাটা খাড়া উপড়ে চলে গেছে। উত্তরে বিশাল এক পাহাড়ের দেয়াল। ওই পাহাড়ের চূড়োটাই সান্দাকফু। তার ওপাশেই ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রূপের রাণী কাঞ্চনজঙ্ঘা। দক্ষিণে যতদূর চোখ যায় সমরেখায় অবস্থিত উচুনিচু ন্যাড়া পাহাড়রাশি। পূবে একটা ছোট্ট এসএসবি(সীমান্ত সুরক্ষা বল) ক্যাম্প। আর পশ্চিমে সেখানে সূর্য হেলে পড়তে শুরু করেছে সেদিকে দীর্ঘাকার খাদ। আকাশে তখনও কালো মেঘের ঘোলাটে মশারীটা টাঙানো। এমন হলে আগামীকাল কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন পাওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবছি তখনই হাওয়া বইতে শুরু করলো। সেই হাওয়ার টানে যেন ঝাঁক বেধে কুয়াশারা উঠে আসছিলো উপরে। গরম পোষাক থাকা সত্ত্বেও যেন হাড়ে কাঁপুনি লাগছিলো।...

February 5, 2018 · 9 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৮

ঠান্ডা হাওয়া যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য রুমের শেষ ছিদ্রটিও বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম। সেজন্যই হয়তো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়। তখনও বাইরে ঘন কুয়াশার মশারিটা টাঙানো। আকাশে প্রায় পূর্ণ চাঁদ কিন্তু তবুও হোটেলের সামনের রাস্তাটুকুও দেখা যাচ্ছে না ঘন কুয়াশায়। সেই কুয়াশার উপরে চাঁদের হলদে আলো পড়ে পৃথিবীটা যেন অপার্থিব হয়ে উঠেছে। শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার এই জোসনা দেখলে কি বলতেন এসব ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছি।...

February 1, 2018 · 8 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৭

অস্তগামী সূর্যের তির্যক আভায় আকাশের সাদা টুকরো টুকরো মেঘগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল তখন। মেহদী দেয়া সাদা দাড়ির মত কিছু খুচরো মেঘ পাহাড়্গুলোর গায়ে গায়ে ঝুলছে। নাকের ডগায় কোন সাড় নাই। দাঁড়িয়ে থাকতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। ইয়োগেন বলল এইতো আর একটু। তার পরিচিত একটা লজ আছে। গিয়েই বিশ্রাম নিতে পারবো। দূর থেকে দেখা টুমলিং এর সৌন্দর্য্য হাঁটায় যেন নতুন উদ্যোম এনে দিয়েছিলো। মিনিট বিশেকের মাঝেই বিকাল চারটার দিকে টুমলিং পৌঁছে গেলাম।...

January 25, 2018 · 8 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৬

মানেভাঞ্জনের সকালটা শুরু হয় বেশ আগেই। সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়ে শেষ রাতের দিকে ভালোই ঘুম হয়েছে। তাও সকাল ৬ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেছে। সহযাত্রীরা তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। পৃথিবীর শেষ স্তব্ধতা যেখানে অনন্তর শান্তি মেলানো, পাগল হয়ে যেতে হয় যার রূপে, সারা জীবন অপলক কাটিয়ে দেয়া যায় যার দিকে তাকিয়ে সেই রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘার নেশা কি আর বিছানায় থাকতে দিবে? মোটা কম্বলেরর নিচ থেকেই শীতটাকে ঝেড়ে ফেলে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়ার ধার না ঘেঁষেই ছুটলাম গাইড আর সিঙ্গালীলা ফরেস্টে প্রবেশের টিকেটের খোজে। এছাড়া গতকাল রাতে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু কেনাকাটাও বাদ পড়ে গিয়েছিল। সেগুলোও কিনতে হবে। আর কিছু না হোক একজোড়া হাতমোজা তো লাগবেই। এখানেই যে ঠান্ডা আরও উপরে গেলে কি হয় কে জানে!...

January 20, 2018 · 8 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৫

অদ্ভুত এক শিহরন, কাব্যিক এক অনুভূতি, অজানা এ পথ চলা। আর কত? কত দূরে কল্পনাতে আঁকা প্রেয়সীর মুখ? আর কত অপরিসীম এই প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হবে? আর কত প্রহর কাটালে কানপেতে শুনতে পাবো হিমালয়ের কান্না? শিশিরজলে পা ভিজিয়ে চলতে শুরু করব রক্তিম সূর্যের দিকে। বিনিদ্র রাতে শুয়ে শুয়ে মুগ্ধ হয়ে জোসনা মাখা শুভ্র হিমালয়কে দেখব। আচ্ছা সেই জোসনা রাতে কি বৃষ্টি হতে পারে না? বৃষ্টির ফোঁটাকে মনে হবে ঝড়ে পড়া জোসনা। আকাশ সাজাবে হাজারো নক্ষত্র। যে আকাশকে ভালোবেসেই পাহাড়ের বেড়ে ওঠা। জানিনা সামনের পথে কি অপেক্ষা করছে। আপাতত কল্পনাতেই আমার বসত।...

January 19, 2018 · 5 min · সোয়াইব