“প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে এক ফোঁটা অশ্রুও হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি,হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে,তাই। মৃত্যুর খবর আসে। মরা মানুষ দেখি। মৃতদেহ কবরে নামাই।পরক্ষণে ভুলে যাই।রাইফেলটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট টিলাটার ওপরে এসে দাঁড়াই।সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে।কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আর একটা গ্রাম। খবর এসেছে ওখানে ঘাঁটি পেতেছে ওরা। একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল। একসঙ্গে থেকেছি। শুয়েছি। খেয়েছি। ঘুমিয়েছি। এক টেবিলে বসে গল্প করেছি। প্রয়োজনবোধে ঝগড়া করেছি। ভালবেসেছি। আজ তাদের দেখলে শরীর রক্ত গরম হয়ে যায়।চোখ জ্বালা করে ওঠে। হাত নিশপিশ করে। পাগলের মতো গুলি ছুঁড়ি। মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। একজনকে মারতে পারলে উল্লাসে ফেটে পড়ি।ঘৃণায় থুতু ছিটোই মৃতদেহের মুখে।“এভাবেই ‘সময়ের প্রয়োজনে’র মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো লোকটার সাথে। এই লোকটার বইগুলো পড়তে ইচ্ছা করেনা। একদমই না। পড়তে শুরু করলেই মনে হয় কে জানি বুকটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। পুরোটা লেখনীজুড়ে কিভাবে যেন আবেগের ব্যাবচ্ছেদ করে যান নির্লিপ্ততার সাথে। ৪৫ বছর কেটে গেলেও এখনও মনে হয় ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নের ক্ষণজন্মা মানুষটি এখনও বেঁচে আছেন। একদিন অন্তর্ধান থেকে বেড়িয়ে এসে লিখবেন আরও একটি ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ কিংবা ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। এসব ভাবতে গেলেই ভীষণ যন্ত্রনা হয়। অথচ ভাবতেই আমি ভালোবাসি।

এই বিস্মৃত ক্ষনজন্মা ঐতিহ্য পুরুষের জন্ম হয়েছিলো ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ জহিরউল্লাহ। কিন্তু বাঙালীর সত্তায়, অন্তরে তিনি জহির রায়হান হিসেবেই খচিত হয়ে আছে। জন্ম মজুপুর হলেও তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিটে, অতঃপর ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায়। পিতা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন একজন পরহেজগার ব্যক্তি। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তাঁর পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে। ফেনী আমিরাবাদ হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করবার পর ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এরপরে ঢাকা মেডিকেল কলেজেও কিছুদিন অধ্যায়ন করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫০ সালে ছাত্র অবস্থায়ই যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন জহির রায়হান। এরপর কাজ করেছেন খাপছাড়া, যান্ত্রিক ও সিনেমা পত্রিকায়। ১৯৫৫ সালে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৬ সালে বাংলা মাসিক পত্রিকা প্রবাহ তে সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ছোটবেলাতেই জহির রায়হান রাজনীতির সংস্পর্শে এসেছিলেন। বড়ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার ও বড়বোন নাফিসা কবির বাম ধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তাদের কাছ থেকেই জহির রায়হানের বামপন্থী চিন্তাচেতনার হাতেখড়ি হয়। জগন্নাথ কলেজে অধ্যায়নকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা হয়। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সেই অগ্নিঝরা সময়ে যে দশজন অকুতোভয় তরুন প্রথম ১৪৪ ধারা ভেঙ্গেছিলেন, তাদের মধ্যে জহির রায়হান ছিলেন অন্যতম। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া তে। নিজে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেই তাঁর সাহিত্যকর্মে ভাষা আন্দোলন এক উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন-

“জহির রায়হান সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র কথাসাহিত্যিক যাঁর উদ্ভবের পেছনে আছে ভাষা আন্দোলন। যদি বায়ান্নর একুশ না ঘটত তবে জহির রায়হান হয়ত কথাশিল্পী হতেন না।”

সাংবাদিক হিসেবে কাজ করলেও তার প্রচন্ড ঝোক ছিলো সাহিত্য ও চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে। পকেটে মাত্র ছয় আনা নিয়ে একটা রঙিন সিনেমা বানিয়ে ফেলার সাহস করতেন এই বিস্ময়কর জাদুকর। ১৯৫৬ সালের শেষদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিখ্যাত চিত্রপরিচালক এ. জে. কারদার (আখতার জং কারদার) ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের উর্দু অনুবাদের পটভূমিকায় ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ নামে চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন। জহির রায়হান এই চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিলেন। মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রের প্রধান পাত্র-পাত্রী ছিলেন আনিস (খান আতাউর রহমান) ও ভারতের প্রখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র। জাগো হুয়া সাভেরা’র পরে তিনি সালাউদ্দিনের সহকারী হিসেবে যে নদী মরু পথে চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ১৯৬০ সালেই পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি এই চলচ্চিত্রগুরু।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি এই চলচ্চিত্রে সূচনাসঙ্গীত তৈরি করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে কাজ করবার সময় ছবির নায়িকা সুমিতা দেবীর প্রেমে পড়ে যান তিনি। ফলে ১৯৬১ সালে তাদের পরিনয় ঘটে ও দুই সন্তান অনল রায়হান ও বিপুল রায়হানের জন্ম হয়। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম(উর্দু ভাষায়) নির্মাণ করেন এবং পরের বছর তাঁর প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে নতুন ধারার সূচনা করেন জহির রায়হান। পাশাপাশি প্রযোজনা করেন জুলেখা, দুইভাই, সংসার, সুয়োরাণী-দুয়োরাণী, কুচবরণ কন্যা, মনের মতো বউ, শেষপর্যন্ত প্রতিশোধ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে। এরই মাঝে ১৯৬৮ সালে পরিনয়বন্ধনে আবদ্ধ হন চিত্রনায়িকা সুচন্দার সাথে। তাদের ঘরে জন্ম হয় দুই সন্তানের- অপু রায়হান এবং তপু রায়হান।

অমিত প্রতিভার স্বাক্ষর হয়ে এই সময়টাতেই একে একে প্রকাশিত হয় শেষ বিকেলের মেয়ে, আরেক ফাগুন, বরফ গলা নদী, আর কত দিন-এর মতো কালজয়ী সব উপন্যাস আর সূর্যগ্রহন (১৩৬২ বাংলা), তৃষ্ণা (১৯৬২), একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৭০) কয়েকটি মৃত্য এর মত অভূতপূর্ব সব গল্পগ্রন্থ। ৭০’রের শেষদিকে তার উপন্যাস “আর কত দিন” এর ইংরেজি ভাষান্তরিত চলচ্চিত্র “লেট দেয়ার বি লাইট”-এর কাজে হাত দেন জহির।


একটি দেশ, একটি সংসার, একটি চাবির গোছা ও একটি আন্দোলন- এই চারটি সরল বাক্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশ সৃষ্টির গল্প। লুকিয়ে আছে একটি দেশের গল্প, সে দেশের মানুষের কষ্টের গল্প, অত্যাচার আর ক্ষতের গল্প। লুকিয়ে আছে একটি চলচ্চিত্রের গল্প, যে চলচ্চিত্রটি পুরো পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সেই “জীবন থেকে নেয়া” চলচ্চিত্রটি জহির রায়হানের কালজয়ী সৃষ্টি।

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে জহির রায়হান সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেছিলেন। এই আন্দোলন তাঁকে ব্যাপকভাবে স্পর্শ করেছিল। গ্রেফতারকৃত প্রথম ১০ ভাষা সৈনিকদের মাঝে তিনি ছিলেন অন্যতম। তাঁর বিভিন্ন লেখায় বার বার উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলনের কথা। সেই সময়ের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে সৃষ্টি করেছেন আরেক ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারীর মত কালজয়ী উপন্যাস ও পোষ্টার-এর মত গল্পের। একে একে সোনার কাজল, কাঁচের দেয়াল, সঙ্গম, বাহানা প্রভৃতি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরেও তাঁর মনে অতৃপ্তি কাজ করছিল। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৫ সালে জহির রায়হান “একুশে ফেব্রুয়ারি” নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলেন। কিন্তু সরকার থেকে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে জহির রায়হান একটু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। সেন্সর বোর্ডের ধরা-বাঁধা নিয়মের মাঝে থেকেই, একটা রূপকধর্মী চলচ্চিত্র তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেন। এর বছর দশেক পরে ঠিক এমন একটি কাজ করেছিলেন কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তৎকালীন সরকারকে ব্যাঙ্গ করে নির্মাণ করেছিলেন তার রূপকধর্মী ছবি “হীরক রাজার দেশে”।

১৯৭০ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি দিকে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছিল। জহির রায়হান যেন ঠিক এমনই সময়ের প্রতীক্ষায় ছিলেন। নির্মাণ কাজ শুরু করলেন তাঁর বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত ছবিটির। প্রথমে পরিকল্পনা ছিলো জহির রায়হান তাঁর লেখা কাহিনী নিয়ে শুধু ছবিটি প্রযোজনা করবেন। পরিচালনা করবেন নুরুল হক বাচ্চু। ছবিটির নাম রাখা হয়েছিলো ‘তিনজন মেয়ে ও এক পেয়ালা বিষ’। কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরেই ছবির নাম পরিবর্তন করে রাখা হলো ‘জীবন থেকে নেয়া’। আর সিদ্ধান্ত হলো জহির রায়হান শুধু প্রযোজনা নয়, পরিচালনাও করবেন।

জীবন থেকে নেয়ার গল্প এক পরিবারকে নিয়ে। খান আতাউর রহমান পেশায় একজন আইনজীবী। বাইরে জাঁদরেল উকিল হলেও, ঘরে বৌয়ের কাছে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয় তাকে। শুধু তিনি নন, পরিবারের সবাইকে কঠোর হস্তে শাসন করেন রওশন জামিল। পরিবারে আরও আছে রওশন জামিলের দুই ছোট ভাই- শওকত আকবর ও রাজ্জাক। এক সময় এই দুই ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে ঘরে আসে দুই বোন- রোজি সামাদ ও সুচন্দা। বড় বোনটি কোমল স্বভাবের হলেও, ছোট বোন সুচন্দা প্রতিবাদী। একদম যেন তার ভাইয়ের স্বভাব পেয়েছে। তাদের বড়ভাই আনোয়ার হোসেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। রওশন জামিল বুঝতে পারেন, এভাবে চলতে থাকলে তার একক কর্তৃত্বের দিন শেষ। অতি আকাঙ্ক্ষিত চাবির গোছাটিও হাতছাড়া হয়ে যাবে। ফন্দি আঁটতে থাকলেন কিভাবে দুইবোনের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি করে, চাবির গোছাটি চিরতরে নিজের করে নেওয়া যায়।

এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের আবডালে জহির রায়হান তুলে ধরেন তৎকালীন রাজনৈতিক আন্দোলন, সামরিক শাসন তথা একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান। ছবির বড় বোনের চরিত্রটি যেমন পাকিস্তানী শাসকদের প্রতিভূ (ছবির শেষ পর্যায়ে খান আতাউর রহমান রওশন জামিলকে হিটলারের সাথে তুলনা করেন) অন্যদিকে আনোয়ার হোসেনের চরিত্রটি যেন মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতাকালীল এক অবিসংবাদিত নেতাকে। এই ছবিতেই প্রথমবারের মত মহাসমারোহে ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের দৃশ্য দেখানো হয়। সত্যিকারের প্রভাতফেরীর দৃশ্য ধারণ করা হয় ছবিটির জন্য।

ইয়াহিয়া সরকার, বিগ্রেডিয়ার রাও ফরমান আলী , মেজর মালেক ও তাঁদের এদেশীয় দোসররা আঁচ করতে পেরেছিল, জহির রায়হান আর দশটা চলচ্চিত্রের মত সাধারণ কিছু নির্মাণ করছেন না। এই ছবিটি নিশ্চয়ই ভিন্ন কোন অর্থ বহন করছে। তাই তারা ছবিটিকে সেন্সর ছাড়পত্র না দেয়ার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু দেশপ্রেমিক সচেতন দর্শকদের মিছিল, স্লোগান ও দাবির মুখে নির্ধারিত তারিখের এক দিন পর অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল সামরিক সরকার বাধ্য হয়েছিল এ ছবির ছাড়পত্র দিতে।

‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্র সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রখ্যাত পরিচালক ও জহিরের সহকর্মী আমজাদ হোসেন বলেন “প্রথম দিনই নিষিদ্ধ হলো এর প্রদর্শনী। সব সিনেমা হল থেকে পাক আর্মি জব্দ করে নিয়ে গেল সিনেমার রিল। ঢাকার গুলিস্তান হলের সামনে শুরু হলো বিক্ষোভ। পরদিন সেন্সর বোর্ড আবার বসবে সিনেমাটি দেখতে। সাথে থাকবে রাও ফরমান নিজে। জহির অনেক ভেবে একজনের কথাই স্মরণে আনতে পারলেন, যিনি পারেন ছবিটিকে আবার আলোর মুখ দেখাতে। জহির রায়হান আমজাদকে দায়িত্বটা দিলেন। কারণ আমজাদের এলাকার মানুষ তিনি। আমজাদ গেলেন সেন্সর বোর্ডের সদস্য নাট্যকার আসকার ইবনে সাইকের কাছে। ভদ্রলোক আবার নিয়মিত নামায রোজা করতেন। আমজাদ হোসেন তার হাটুর কাছে বসে পা টিপতে টিপতে বললেন, স্যার আপনার উপরে সবকিছু। আপনি দয়া করে কালকে যাবেন। উনি বললেন, আমি অসুস্থ। হাই প্রেসার তাই যেতে পারবো না। ফ্যান ছেড়ে হাত পা ছেড়ে বসে রইলেন। আমজাদ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললেন, স্যার সারাদেশ আপনার দিকে তাকিয়ে।

পরদিন সাইক সাহেব গেলেন সেন্সর বোর্ডে। বোর্ডে উপস্থিত অল পাকিস্তান সেন্সর মেম্বার। মানে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সকল সদস্য। আর আমজাদ প্রজেকশন রুমে চুরি করে অবস্থান নিয়ে প্রজেকশনের ছোট ছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। ছবিটি শেষ হলো। রাও ফরমান সহ বাকি সদস্যরা ছবিটি দেখলেন। ছবি শেষ হলে পিন পতন নিস্তব্ধতা গোটা রুম জুড়ে। চেয়ারম্যান সাহেব সবার মুখের দিকে তাকিয়ে কি মনে করে আসকার ইবনে সাইককে বললেন, আপনি বলেন। তিনি, কিছুণ চুপ থেকে তারপর দাঁড়ালেন। সবার মুখের দিকে একবার চেয়ে বললেন, ‘স্যার পবিত্র কোরআনে কোন মিথ্যে কথা বলা নেই। মিথ্যে কথা বলবার কোন সুযোগও সেখানে দেয়া হয়নি। জহির হয়ত ভুল করে একটা সত্য সিনেমা বানিয়ে ফেলেছে। এই সত্যকে আমি কিভাবে মিথ্যা বলি!’ কেউ আর কোন কথা বলল না। ছবিটি মুক্তি পেল। তবে প্রজেকশন শেষে রাও ফরমান জহিরকে বললেন, ‘ছবিটি ছেড়ে দিলাম। বাট আই উইল সি ইউ’।

আর এই ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ছবিটি নিজেই হয়ে গেল এক জীবন্ত ইতিহাস। এটিই এদেশের প্রথম ছবি যা দেখার অধিকার আদায়ে এদেশের দর্শক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করেছে। জীবন থেকে নেয়া ছবির বিষয়বস্তু ভাষা আন্দোলন হবার পরেও, এটা মুক্তিযুদ্ধের ছবি হয়ে গিয়েছে সমাপ্তির জন্য। ‘পারিবারিক আন্দোলন’ এর শেষে জন্ম নেয় এক নতুন শিশু। আনোয়ার হোসেন তার নাম রাখেন “মুক্তি”।


জহির রায়হান ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুথানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।

একাত্তর জহির রায়হানের জীবনকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল এক বিচিত্র সমীকরণের সামনে। এসময়ে দেশমাতৃকার সেবায় তিনি আত্মনিয়োগ করেন চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে প্রবাসী মুজিবনগর সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিরাগভাজন হন তিনি। এ সময়ে পাকিস্তানীদের বর্বরতা আর নৃশংসতার এক অনবদ্য উপাখ্যান, তাঁর কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম স্টপ জেনোসাইড এর নির্মাণ ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়। অনেক সেক্টরে স্যুটিং এর জন্য প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও ইচ্ছায় প্রামাণ্যচিত্রটি সমাপ্ত হলেও সেন্সর বোর্ডে আটকে দেবার চেষ্টা করা হয়। এমনকি আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতা এজন্য অনশন ধর্মঘট পর্যন্ত করেছিলেন।

কিন্তু সব বাধাকে অতিক্রম করে জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড মুক্তিলাভ করে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে স্টপ জেনোসাইড- ই সবচেয়ে শৈল্পিক ও মানবীয় আবেগ সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র হিসাবে স্বীকৃত। এছাড়াও তিনি এসময়ে নির্মাণ করেন এ স্টেট ইজ বর্ন প্রামাণ্য চিত্রটি। মুজিবনগর সরকারের আদর্শ উদ্দেশ্যের সাথে বাংলাদেশের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা সংযুক্ত করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েছিল। “বার্থ অফ আ নেশন” ছিল তাঁর সৃষ্টি, বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়ন’ আর আলমগীর কবীরের ‘লিবারেশন ফাইটারস’ এর পেছনের কুশীলবও ছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের যে সময়টা আলবদরের পাকিস্তানি হায়েনারা এ দেশকে চিরতরে পঙ্গু ও পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়ার আপ্রান চেষ্টা করেছিল, সেই সময়টা তিনি ছিলেন ভারতে। ফলে এই নির্মম ম্যাসাকার থেকে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলীম চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মত নক্ষত্রগুলোর সাথে তার বড় ভাই শহিদুল্লাহ কায়সারকেও ১৩ই ডিসেম্বর ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। এ বি এম খালেক মজুমদার ছিল ৭১-এর কুখ্যাত আল বদর কমান্ডার। জহির রায়হানের বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে কালো কাপড়ে চোখ বেধে তুলে নিয়ে যাবার সময় তাকে চিনে ফেলেছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে পান্না বলেছিলেন,

“যখন ওকে (শহীদুল্লাহ কায়সার) অন্ধকার ঘর থেকে টান দিয়ে আমার সঙ্গে বারান্দায় নিয়ে এলো, পেছন থেকে ওর হাতটা ধরে আমিও বারান্দায় গেলাম। গিয়ে তাড়াতাড়ি সুইচটা অন করে দিলাম। সব আলো হয়ে গেল। সবার মুখে মুখোশ। আমার ননদ পাশ থেকে দৌড়ে এলো। ও তখন সন্তানসম্ভবা। উপায়ান্তর না পেয়ে একজনের মুখের কাপড়টা টান দিয়ে খুলে ফেলল। সে-ই ছিল খালেক মজুমদার।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর জহির রায়হান ঢাকায় ফিরে আসেন। ফিরে এসেই শুনলেন তার অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সার ১৪ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ। বড় ভাইকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতেন ও ভালবাসতেন জহির। দেশে ফিরে দাদার নিখোঁজ হবার খবর পেয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়েন পাথরকঠিন মানুষটি। দাদাই যে ছিল তার সবচেয়ে বড় আপনজন! দাদা আর নেই এটা তাকে কোনভাবেই বিশ্বাস করানো যায়নি। উদ্ভ্রান্তের মত খুঁজতে শুরু করেন দাদাকে। কয়েক দিনের মাথায় বুদ্ধিজীবি হত্যা ও গণহত্যার তথ্য অনুসন্ধান এবং ঘাতকদের ধরার জন্য একটি কমিশন গঠন করেন তিনি। জহির ছিলেন এই কমিটির চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের বাশারত আলী।

হঠাৎ একদিন সকালে একটা ফোন পেলেন জহির রায়হান। সেদিন ছিল ৩০ জানুয়ারী, ১৯৭২। প্রথমে ফোন ধরেছিলেন জহির রায়হানের ছোট বোন ডাক্তার সুরাইয়া যার কাছে জহিরকে খোঁজা হচ্ছিল । সুরাইয়া জহির রায়হানকে ডেকে ফোন ধরিয়ে দেয় । টেলিফোনে জহিরকে বলা হয়েছিল, আপনার বড়দা মিরপুর বারো নম্বরে বন্দী আছেন। যদি বড়দাকে বাঁচাতে চান তাহলে এক্ষুণি মিরপুর চলে যান। একমাত্র আপনি গেলেই তাকে বাঁচাতে পারবেন। টেলিফোন পেয়ে জহির রায়হান দুটো গাড়ী নিয়ে মিরপুরে রওনা দেন। তাঁর সাথে ছিলেন ছোট ভাই মরহুম জাকারিয়া হাবিব, চাচাত ভাই শাহরিয়ার কবির, বাবুল (সুচন্দার ভাই), আব্দুল হক (পান্না কায়সারের ভাই), নিজাম ও পারভেজ। এর কয়েকদিন আগ থেকেই রফিক নামের এক ব্যক্তি জহিরকে আশ্বাস দিয়ে আসছিল যে, শহিদুল্লাহ কায়সার বেঁচে আছেন। তাকে জীবিত পাওয়া যাবে। জহিরের চাচাতো ভাই শাহরিয়ার কবির বহু বার এই রফিককে ধাপ্পাবাজ বোঝাতে চাইলেও দাদার শোকে পাগল প্রায় জহির রায়হান তাতে কর্ণপাত করেননি। এটাই তার কাল হয়েছিল। দাদাকে শুধু একটাবারের জন্য ফিরে পেতে পৃথিবীর সবকিছু দিতে রাজি ছিলেন জহির। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল ঘাতকেরা!

কাকতালীয়ভাবে ঠিক সেইদিনই বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব মইনুল হোসেন চৌধুরী সশরীরে এসে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মিরপুরের বিহারীদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করে মিরপুর স্বাধীন করতে। সে উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্ট অভিযান চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী পুরো মিরপুর ঘিরে রেখেছিল। মিরপুর বিহারী এবং পাকিস্তানী সেনাদের দখলে থাকায় সেখানে সিভিলিয়ানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তাই চাচাত ভাই শাহরিয়ার কবিরসহ বাকিরা আর জহিরের সাথে মিরপুরে ঢুকতে পারেননি, সেনাদের কন্টিনজেন্টে একমাত্র সিভিলিয়ান ছিলেন জহির। সেনারা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো মিরপুর। এর মধ্যে মিরপুর সাড়ে এগারো নম্বর ধরে ১২ নম্বর সেকশনের দিকে যে দলটি গিয়েছিল তাতে ছিলেন জহির। দলটিতে ছিল প্রায় ৪৫-৫০ জন সেনা। গাড়িগুলো মিরপুর সাড়ে এগারো হতে ধীরে ধীরে মিরপুর ১২-এর দিকে অগ্রসর হতে হতে সাদা পানির ট্যাংকটার সামনে এসে থামে। হঠাৎই সকাল এগারোটার দিকে আচমকা কয়েকশো বিহারী সেনাহামলা করে এই দলটির উপর। বাংলা ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার এই অগ্নি পুরুষকে এরপরে আর কখনও দেখা যায়নি। কালের অতলে হারিয়ে গেলেন তিনি। বাংলাদেশ মুখোমুখী হলো এক অপূরণীয় শূন্যতার।

এরপর কেটে গেছে দীর্ঘকাল। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাস। জহির রায়হান হারিয়ে যাওয়ার ২৮ বছর পর মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারে আবিষ্কৃত নূরী মসজিদ সম্প্রসারণ কাজ চলবার সময় শ্রমিকেরা মাটির সামান্য নিচে কংক্রিটের স্লাব দিয়ে মুড়ে দেওয়া একটা কুয়োর সন্ধান পায়। নির্মাণশ্রমিকরা কৌতূহলবশত স্লাবটা ভেঙ্গে ফেলার সাথে সাথে বেরিয়ে আসে ২৮ বছরের পুরনো নির্মম ইতিহাস। তিনটি মাথার খুলি এবং বেশকিছু হাড়সহ কাপড়চোপড়। আবারও সামনে চলে আসেন হারিয়ে যাওয়া জহির রায়হান।

রাজনৈতিক মহল জহির রায়হানকে পুঁজি করে কাঁদা ছোড়াছুড়িও কম করেনি। একদল বলে চলেছে- একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আর রাজাকার, আল-বদরেরা কোন গণহত্যা চালায়নি, সব করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা নাম ধারন করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ নেতারা ভারতে যে আনন্দ ফুর্তি করেছে, তার সকল তথ্য আর প্রমান জহির রায়হানের কাছে ছিল, তাই শেখ মুজিবের নির্দেশে “র” তাকে গুম করে ফেলে।


আর একটি মহল দাবী করে বসে আছে, স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিই সেদিন জহির রায়হানকে খুন করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু দুর্লভ নৃশংসতার দৃশ্য জহির রায়হান ক্যামেরায় বন্দি করে পুরো পৃথিবীকে দেখিয়েছেন। এবং জানিয়েছেন পাকিস্তানি সেনারা কি অকল্পনীয় ও অভাবনীয় বর্বরতা চালিয়েছে। এছাড়া বুদ্ধিজীবিদের নৃশংসভাবে হত্যা এবং পুরো ঢাকায় চালানো গণহত্যার সম্পর্কে তিনি তথ্য সংগ্রহ সংগ্রহ করেছিলেন। যা প্রকাশ করলে তৎকালীন অনেক নেতারই কুকর্ম ফাঁস হয়ে যেত।

এই দুই পক্ষেরই দাবীর সত্যতা নিয়ে তথ্য প্রমানের ঘাটতি নেই কোথাও। বিভিন্ন প্রখ্যাত দৈনিক পত্রিকা, শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার ও জহির রায়হানের বোন নাফিসা কবিরের বক্তব্য, তাঁর পুত্র অনল রায়হান ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের প্রতিবেদন, প্রখ্যাত সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরী ও বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী- সবকিছু দিয়েই দুই পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। কিন্তু আমার অবাক লাগে জহির রায়হানের ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের নিস্পৃহ আচরণ।ঘাতককে খুঁজে বের না করে তারা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে এই অগ্নিপুরুষের অন্তর্ধানকে ব্যবহার করে চলেছে নিজেদের স্বার্থে।

আমি কোন রাজনৈতিক মতবাদে(বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে) বিশ্বাসী নই। তাই জহির রায়হানের অন্তর্ধান নিয়ে বিচার বিশ্লেষন করতেও মন সায় দেয় না। আমার শুধু আফসোস হয়। একমাত্র যে মানুষটি বাংলাদেশকে অস্কার এর সম্মান এনে দিতে পারতেন, যে মানুষটি বাংলার কথা সাহিত্যকে করতে পারতেন পরিপূর্ণ সেই মানুষটিকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। পারলাম না তার খুনিদের খুঁজে বের করতেও। সত্যি বলতে কি আমরা জহির রায়হানের মত মানুষকে ডিজার্ভ করি না। কিন্তু “It’s not about deserve. It’s about what you believe.” আমারও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় একদিন জহির রায়হানের খুনিদের খুঁজে বের করা হবে। সেই অপেক্ষায় রাত বাড়ছে, হাজার বছরের দীর্ঘ সেই রাত!


উপজীব্যঃ

[১]পিতার অস্থির সন্ধানে - অনল রায়হান

[২]মুক্তিযুদ্ধ-আগে ও পরে - পান্না কায়সার

[৩]একুশে ফেব্রুয়ারি - শাহরিয়ার কবিরের ভূমিকায়

[৪]রক্ত ও কাঁদা ১৯৭১ -তাদামাসা হুকিউরা

[৫]জহির রায়হানের চলচ্চিত্র পটভূমি বিষয় ও বৈশিষ্ট্য - অনুপম হায়াৎ

[৬]নিখোঁজ নন, গুলিতে নিহত হয়েছিলেন জহির রায়হান - ভোরের কাগজ

[৭]জহির রায়হানঃ হারিয়ে যাওয়া এক সুর্যসন্তান

[৮]লেট দেয়ার বি লাইট

[৯]জহির রায়হানের অন্তর্ধানঃ সুপরিকল্পিত এক চক্রান্ত

[৯]জহির রায়হানের সাক্ষাতকার

[১০]কোথায় জহির রায়হান! - জনতার মঞ্চ

[১১]ডেথ অব আ জিনিয়াস : জহির রায়হান

[১২]এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য’, জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী

[১৩]মিরপুরের সদ্য আবিষ্কৃত বধ্যভূমি ও জহির রায়হানের অন্তর্ধান প্রসঙ্গ - শাহরিয়ার কবির

[১৪]স্টপ জেনোসাইডএর চিত্রনাট্য; ভূমিকা ও সম্পাদনা - মানজারে হাসীন

[১৫]যুদ্ধাপরাধ ৭১ শাহরিয়ার কবির’ (ডকুমেন্টারি)

[১৬]জহির রায়হান : জন্ম যার সময়ের প্রয়োজনে

[১৭]জীবন থেকে নেয়া : গল্প হলেও সত্যি

[১৮]ঐতিহ্য পুরুষ জহির রায়হান - মীর শামছুল আলম বাবু