অক্টোবরের রাত…

ঘুম ভেঙে স্বপ্ন মনে না থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দুঃস্বপ্নগুলো মাথার মধ্যে দপদপ করতে থাকেনা। যদিও ঘামে ভেজা শরীর ক্রমশই মনে করিয়ে দেয় তা মোটেই সুখকর ছিলো না। এরপর সবকিছু ধীরেধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। উইন্ডো ব্লাইন্ডটা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে যাওয়ায় বাইরের প্রবারণা পূর্ণিমার চাঁদের রুপোলী আলো ভরিয়ে ফেলেছে পুরো ঘরটাকে। ক্লান্ত জানালার কার্ণিশে ঝুলে আছে উদাসীন বাতাস। ঝকঝকে ঘরটা যেন গার্হস্হ্য শুন্যতার এক পোর্টফলিও। একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতার নিমিত্ত ভর্তি তৈজসে বন্দী কিছু নৈমত্তিক হিস্টরিয়া, দেয়াল জুড়ে লেপটে থাকা কিছু বেঢপ বিষণ্ণতা।...

October 29, 2023 · 3 min · সোয়াইব

স্টেশনরোড

এই বিষন্ন সুন্দর শহরটা আমাকে কখনোই আলাদা করে মনে রাখবে না। এই শহর, শহরের শতাব্দী প্রাচীন বাড়িঘর, উঁচু নিচু পথঘাট, ভাঙাচোরা সোভিয়েত আর্কিটেকচার, আদিম সর্পিনী সহোদরার মত ছড়িযে থাকা ট্রাম লাইন; সমস্তকিছুই আমার প্রস্থানের সাথে সাথে আমাকে ভুলে যাবে। এই শহরটা যে অনেক বেশি স্বার্থপর; আমার থেকে, তোমার থেকে, তোমাদের থেকেও। তবু এই স্টেশনটা আমাকে মনে রাখবে দীর্ঘকাল। ওর সাথে যে সখ্যতা গড়ে উঠেছে আমার। উৎসব ফেরত মানুষগুলোর কোলাহল থেমে যায় এখানে এসে। তারা প্রিয়-অপ্রিয় মানুষের জন্য ঘরে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। রাত সাড়ে এগারোটার শেষ ট্রামটাও ছেড়ে যায়। তবু আমরা ঠায় দাড়িয়ে থাকি। দুটো মাতাল পাশের বেঞ্চিটার উপর বসে তীব্র কণ্ঠে কিছু বলে। আমরা দুজনের কেউই কিছু বুঝতে পারি না। যেমনটা আমাদের কথা বুঝে না কেউ। আমাদের না বলা হাজারও কবিতা হেমন্তের ঘুর্ণি বাতাসে ঝরা পাতার মত উড়ে যায় শূণ্যে। কখনো আমাদের হৃদয় হিম করে দিয়ে তুষার পড়তে শুরু করে। শুভ্র তুষার কনা আমাদের বুকে সাকুরা ফুল হয়ে ঝরতে থাকে। এরপর বসন্ত আসে। আমাদের পাজরের হাড় ভেদ করে অবহেলায় বাড়তে শুরু করে কিছু বুনো ঘাসফুল। সেই সাথে বাড়তে শুরু করে রাত। একা ল্যাম্পপোস্ট প্রার্থনায় দাড়িয়ে থাকে আমাদের মাথার উপর, অসহায় মৃত হাজারো স্মৃতি-বিস্মৃতির নিরব সাক্ষী হয়ে....

May 1, 2022 · 1 min · সোয়াইব

মহীনের ঘোড়াগুলি ঘাস খায় নাকি গান গায়?

প্রবাস জীবনে প্রায় আড়াই বছর হতে চললো। এরমধ্যে গত দেড় বছর ধরে যে বাড়িটায়(বাড়ি না বলে অ্যাপার্টমেন্টে বা রুম বলা উচিত) থাকছি তার পাশেই বিশাল আয়তনের গোরস্থান। সন্ধ্যা হতে না হতেই পুরো চরাচর জুড়ে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। সেই নিস্তব্ধতার মাত্রা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেয় এসব দীর্ঘ হিম রাত্রি। সারাদিন বাসায়ই বসে থাকা হয়। বাইরে বের হবার জো নেই। উষ্ণ বিছানার আহবানে শুয়েও পড়ি সাজ বাতি না নিভতেই। কিন্তু শীতের দীর্ঘ রাত্রির অবসান হয় না।...

January 9, 2022 · 3 min · সোয়াইব

পরজীবী

শরীরটা এখনও পুরোপুরি ভালো না। থেকে থেকে ঘাড়ের ব্যথাটা বড্ড ভোগাচ্ছে। সকালবেলা চোখ খোলার পরেও ঘুম থেকে উঠতে আধঘন্টা কখনওবা পুরো ঘন্টা লেগে যায় কখনো। ঘাড়টাকে বিছানা থেকে তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় কিছুক্ষণ। ঘাড় নাড়াতে গেলে কড়মড়ে একটা শব্দ শুনতে পাই। এরপর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করে৷ ডাক্তার অবশ্য বলেছিলো নিয়মিত ব্যায়াম করা ছাড়া আর কোন দীর্ঘস্থায়ী ওষুধ নেই৷ আলসেমি করে সেও ছেড়ে দিয়েছি শীত পড়তে শুরু করেছে পর থেকে। প্রাত্যহিক যুদ্ধ শেষে কফির মোকাটা চুলোর উপর বসিয়ে প্রাতঃকৃত্য শেষ করি। প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যথাটা বোধহয় কফির জন্যই হচ্ছে। তখন কফি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার আস্বস্ত করলো ব্যথার সাথে কফি খাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই৷ তখন থেকে শুরু হয়েছে লিটার লিটার কফি পান৷ কফি হয়ে গেলেই বসে পড়ি টেবিলে।...

December 10, 2020 · 4 min · সোয়াইব

শ্রিভবুগেন (Schwibbögen)

গতবছর যখন কেমনিটজ এসেছি তখন ঠিক ক্রিসমাসের আগের মুহূর্ত। শরতকে বিদায় জানিয়ে মাঘের সন্যাসী আসি আসি করছে। রংবেরঙের মৃতপ্রায় পাতায় গাছে গাছে যেন আগুন লেগে আছে। হলুদ-কমলা রঙেরও যে এত রকম রঙবিন্যাস হতে পারে এখানে না আসলে বোধহয় জানাই হতো না। ক্রিসমাসকে ঘিরে চারিদিকে উৎসবের আমেজ। তাছাড়া সদ্য ইউরোপ এসেছি। যা দেখি চোখের সামনে সবকিছুই অকল্পনীয় সুন্দর মনে হয়। কোন চিন্তা নেই, কোন পিছুটান নেই; দিনে গোটা দুয়েক ক্লাস আর বিকেল থেকে রাত অবধি শহরের পথেঘাটে বাউন্ডুলেপনা। বেশ চলছিলো এমনই। এরপর কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধীরে ধীরে নেমে এলো শীত। বাহারী পাতারা অদৃশ্য হলো নিমেষেই। গোটা উপত্যকা পরিনত হলো এক রুক্ষ, শ্রীহীন, বাদামী মরুভূমিতে। বাতাসে এক অদ্ভুত বিষন্নতা।...

December 10, 2020 · 4 min · সোয়াইব

কুমারী, উত্তর দাও তুমি!

মেঘদলের প্লে লিস্ট খুললে প্রথমেই দোটানায় পড়ি যে ‘নির্বান’ শুনবো নাকি ‘কুমারী’ শুনবো। দুইটি গানের কম্পোজিশনই আমার কাছে অসাধারন মনে হয়। এতোদিন জানতাম ‘কুমারী’ গানের কথা ও সুর মেঘদলের মৌলিক। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুবাদ পড়তে গিয়ে জানতে পারলাম এটি ফরাসী কবি রেনে গী কাদু’র (René-Guy Cadou) লেখা কবিতা, যার অনুবাদ করেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও পুরো কবিতাটির বাংলা অনুবাদ হয়ত তিনি করেননি। কিন্তু অনুবাদিত অংশটুকুতেই পরবর্তীতে সুর বসিয়েছেন শিবু কুমার শীল।...

November 19, 2020 · 3 min · সোয়াইব

মানুষ বাঁচাই

নগরের এই শহুরে শরীরে উৎসব গামী কিংবা উৎসব ফেরত মানুষের শব্দের মিছিল। কত শব্দ, কত কোলাহল, কত উন্মাদনা। এত কিছুর ভীড়েও নিরবে, নিঃশব্দে শরীরটাকে নিজের রিক্সায় এলিয়ে দিয়েছেন জালাল মিয়া। কি আর করবেন! সারাদিন পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রযন্ত্রের বোঝা বইতে বইতে যে বড্ড ক্লান্ত তিনি, বড্ড পরিশ্রান্ত। রাত আড়াইটে। হাসপাতালের সিসিইউ’র বাইরে লোহার শক্ত চেয়ারে বসে থাকতে কোমড় শক্ত হয়ে গেছে। একটু হাঁটাচলার জন্য বাইরে দেখতে পাই জালাল মিয়াকে। নিজের রিক্সার হুডে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে ঘুমাচ্ছেন। সামনে পড়ে আছে গোবর ও ডাস্টবিনের ময়লা। সেই তীব্র ঝাঝালো গন্ধের মাঝেও ঘুমাচ্ছেন অঘোরে।...

May 1, 2019 · 3 min · সোয়াইব

প্রযত্নে অবন্তিকা

বসুন্ধরা, ঢাকা ১লা বৈশাখ, ১৪২৬ প্রিয় অবন্তীকা, তোর মনে হতে পারে প্রিয় বলে প্রথমেই ভুল করে ফেললাম। যে মানুষ নিজের সন্তানকে গর্ভে নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে, সে আর যাই হোক প্রিয় হতে পারে না। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তুই সেই প্রিয় স্থানটিই দখন করে বসে আছিস। কারণ আর কেউ না জানুক আমি তো জানি জীবনের কি করুণ পরিহাস তোকে সেই নরককুণ্ডে নিয়ে ফেলেছিলো। তাইতো বিশ্বাস করি তুই আত্মহত্যা করিসনি, তোকে খুন করা হয়েছে। আর তোর খুনীদের তালিকা করতে দিলে আমি নিজের নামটাও সেই তালিকায় রাখতে চাই। হ্যাঁ, আমিও তোকে খুন করেছি। খুন করেছি সেদিন যেদিন তুই বলেছিলি, ‘অভ্র, তুই কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছিস?...

April 14, 2019 · 5 min · সোয়াইব

মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান পরিষ্কার

‘মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার’-শিরোনামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যক শাহাদুজ্জামানের একটি ছোট গল্প রয়েছে। গল্পের বক্তব্য এমন- গল্পের চরিত্র পলাশের বাবা মৃত্যুশয্যায়। তাকে রাখা হয়েছে আইসিইউ-তে, লাইফ সাপোর্টে। চেতনা বলতে পলাশ প্রতিদিন বাবার কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, বাবা আমি পলাশ, চিনতে পারছেন। মৃত্যুপথযাত্রী বাবা সামান্য ঘাড় নাড়েন। এইটুকুই। ডাক্তার বলতে পারছেন না তিনি বাঁচবেন কিনা। বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর এই ঘাড় নাড়াটুকুর মূল্য প্রতিদিন চল্লিশ হাজার টাকা। এভাবে হয়ত সে এক সপ্তাহ সার্ভাইভ করতে পারেন। আবার এক মাসও সার্ভাইভ করতে পারেন। প্রতিদিনকার এই বিপুল অঙ্কের টাকার যোগান দিতে দিতে পলাশ হয়তো নিঃস্ব হয়ে যাবে। কিন্তু দ্বায়িত্ববোধ, সামাজিকতা, নৈতিকতা আর মায়ার জাল ছিঁড়ে সে বের হতে পারে না। তার মনে পড়ে যায় বাবার সাথে তার ছেলেবেলার কথা। সেসব তাকে স্মৃতিকাতর করে দেয়। তাই সে বাধ্য হয়েই এই নিঃস্ব হবার পথ ধরেছে।...

April 10, 2019 · 5 min · সোয়াইব

নিষ্ঠুরতার ভালোবাসা

শরীরটা এখনো ভালো না। থেকে থেকেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠছে। চার দেয়ালের রুমটা ছেড়ে বের হয়েছি অনেকদিন পরে। অনেকদিনের ঘরবন্দী মানুষ হটাত বের হয়ে আকাশ দেখলে আকাশের বিশালতা তার ভালো লাগে। সে বিশাল নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কি কি যেন ভাবতে পারে আনমনে। টং এ বসলাম চা খেতে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। গত ছয় বছরে আপন বলতে এই চা আর সিগারেট। অনেকে ছেড়ে গেছে অনেককে ছেড়েছি, শুধু ছাড়তে পারিনি এই দুই জিনিস। পাশেই রাস্তায় ছুটে চলছে অনেক মানুষ। রিকশায় কিছু কপোত-কপোতি হুড তুলে মুখ লুকিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোও যেন কিছু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তারা এভাবেই যাবে যেন আমি জানতাম।...

March 29, 2019 · 3 min · সোয়াইব