জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৮

ঠান্ডা হাওয়া যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য রুমের শেষ ছিদ্রটিও বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম। সেজন্যই হয়তো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়। তখনও বাইরে ঘন কুয়াশার মশারিটা টাঙানো। আকাশে প্রায় পূর্ণ চাঁদ কিন্তু তবুও হোটেলের সামনের রাস্তাটুকুও দেখা যাচ্ছে না ঘন কুয়াশায়। সেই কুয়াশার উপরে চাঁদের হলদে আলো পড়ে পৃথিবীটা যেন অপার্থিব হয়ে উঠেছে। শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার এই জোসনা দেখলে কি বলতেন এসব ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছি।...

February 1, 2018 · 8 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৭

অস্তগামী সূর্যের তির্যক আভায় আকাশের সাদা টুকরো টুকরো মেঘগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল তখন। মেহদী দেয়া সাদা দাড়ির মত কিছু খুচরো মেঘ পাহাড়্গুলোর গায়ে গায়ে ঝুলছে। নাকের ডগায় কোন সাড় নাই। দাঁড়িয়ে থাকতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। ইয়োগেন বলল এইতো আর একটু। তার পরিচিত একটা লজ আছে। গিয়েই বিশ্রাম নিতে পারবো। দূর থেকে দেখা টুমলিং এর সৌন্দর্য্য হাঁটায় যেন নতুন উদ্যোম এনে দিয়েছিলো। মিনিট বিশেকের মাঝেই বিকাল চারটার দিকে টুমলিং পৌঁছে গেলাম।...

January 25, 2018 · 8 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৬

মানেভাঞ্জনের সকালটা শুরু হয় বেশ আগেই। সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়ে শেষ রাতের দিকে ভালোই ঘুম হয়েছে। তাও সকাল ৬ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেছে। সহযাত্রীরা তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। পৃথিবীর শেষ স্তব্ধতা যেখানে অনন্তর শান্তি মেলানো, পাগল হয়ে যেতে হয় যার রূপে, সারা জীবন অপলক কাটিয়ে দেয়া যায় যার দিকে তাকিয়ে সেই রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘার নেশা কি আর বিছানায় থাকতে দিবে? মোটা কম্বলেরর নিচ থেকেই শীতটাকে ঝেড়ে ফেলে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়ার ধার না ঘেঁষেই ছুটলাম গাইড আর সিঙ্গালীলা ফরেস্টে প্রবেশের টিকেটের খোজে। এছাড়া গতকাল রাতে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু কেনাকাটাও বাদ পড়ে গিয়েছিল। সেগুলোও কিনতে হবে। আর কিছু না হোক একজোড়া হাতমোজা তো লাগবেই। এখানেই যে ঠান্ডা আরও উপরে গেলে কি হয় কে জানে!...

January 20, 2018 · 8 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৫

অদ্ভুত এক শিহরন, কাব্যিক এক অনুভূতি, অজানা এ পথ চলা। আর কত? কত দূরে কল্পনাতে আঁকা প্রেয়সীর মুখ? আর কত অপরিসীম এই প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হবে? আর কত প্রহর কাটালে কানপেতে শুনতে পাবো হিমালয়ের কান্না? শিশিরজলে পা ভিজিয়ে চলতে শুরু করব রক্তিম সূর্যের দিকে। বিনিদ্র রাতে শুয়ে শুয়ে মুগ্ধ হয়ে জোসনা মাখা শুভ্র হিমালয়কে দেখব। আচ্ছা সেই জোসনা রাতে কি বৃষ্টি হতে পারে না? বৃষ্টির ফোঁটাকে মনে হবে ঝড়ে পড়া জোসনা। আকাশ সাজাবে হাজারো নক্ষত্র। যে আকাশকে ভালোবেসেই পাহাড়ের বেড়ে ওঠা। জানিনা সামনের পথে কি অপেক্ষা করছে। আপাতত কল্পনাতেই আমার বসত।...

January 19, 2018 · 5 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৪

নেশাগ্রস্থ আকাশ, খয়েরী পাহাড়, গোলাপী ইচ্ছে, নীল ভালবাসা, লাল অনুভূতি আর সবুজ জোৎসা। পোড়া মস্তিস্ক, পুড়ে যাওয়া অবছায়া। সবকিছু বেতাল আর অল্প অল্প মাতাল। এমন ঘোর লাগা অনুভুতি নিয়েই শিলিগুড়ির হোটেল রত্নায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম গতকাল রাতে। রাতে ঘুম হয়েছে ভালোই। স্বপ্ন দেখেছি এক রূপকথার; যেখানে নেই কোন নগর পতনের শব্দ, নেই কোন যন্ত্রের আর্তনাদ, নেই প্রযুক্তির উৎকর্ষতা। আছে শুধু ধূসর ধুলোয় লুটানো রডোডেনড্রনের গালিচা, উঁকি দিয়ে মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি অবলোকন। আছে রূপকথার গল্প শোনা।...

January 18, 2018 · 6 min · সোয়াইব

মারায়ং তং - একটি ব্যর্থতার শিক্ষা

শুনেছিলাম পাহাড় বিনয় শেখায়। পাহাড় থেকে অনেক কিছু শিখলেও বিনয়টাই শেখা বাকি ছিলো। এবারে সেই শিক্ষাটাও পূর্ণ হলো। পাহাড়ের চুঁড়োয় ওঠা বা সামিট করাই সর্বশেষ কথা নয়। পাহাড় থেকে শিখতে হয়। শিখতে হয় শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা। এটাই যেন সারকথা। পাহাড়ে যাওয়ার নেশাটা দীর্ঘদিনের। চিরাচরিত বান্দরবন কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে কেওক্রাডাং থেকে না হয়ে আমার পাহাড়ে যাওয়াটা শুরু হয়েছিলো এক হাজার ফুটের ছোট্ট এক পাহাড় দিয়ে। সেই যে মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম আর থেমে থাকতে পারিনি।...

January 18, 2018 · 11 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৩

গতকাল দুপুর থেকে চলছি তো চলছিই। এক মুহূর্ত থামার অবকাশ এখন পর্যন্ত মেলেনি। মাঝে পেরিয়ে এসেছি দীর্ঘ পথ। উদ্দেশ্য সেই পাহাড় আর মেঘ ছুয়ে যাবার স্বপ্ন। এক নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে যাচ্ছি। দাঁড়িয়ে আছি সীমানা ঘেঁষে। শিলিগুড়ি হিলকার্ট রোড থেকেই মূলত দার্জিলিং, কালিম্পং, গ্যাংটকগামী জীপগুলোর সারি শুরু হয়। ইচ্ছে তো করছে এখনই জীপে চড়ে বসি। এক নিঃশ্বাসে পৌছে যাবো রূপের রানী, প্রিয়তমা দার্জিলিং এর কোলে। কিন্তু ব্যাকপ্যাক কাঁধে হাটুজোড়া বলছে, “ওরে পাগল, প্রিয়তমার কোলে গিয়ে বসে থাকলেই হবে?...

January 15, 2018 · 6 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ২

মনের মাঝে তিলেতিলে গড়ে ওঠা স্বপ্ন, মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে জমাট বাঁধা হিমালয়ের হাতছানি। কখন আসবে সেই ক্ষন যখন ভোরের টাটকা আলো কাঞ্চনজঙ্ঘারর উপর প্রজ্জলিত হয়ে, প্রতিফলিত হয়ে স্তব্ধ করে দেবে হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন! যাত্রাপথে বাস বিরতি দিয়েছিল সিরাগঞ্জের হাটিকুমরুলে। সারাদিনের উৎকন্ঠায় খেতেই যে ভুলে গিয়েছিলাম এই প্রথম পেট জানান দিচ্ছিল। কিন্তু খাওয়া কি আর হয়! তাও কোনমতে দুইখানা রুটি আর একটা ডিম পেটে চালান করে দিয়ে বাসে উঠে শুভ্র চূড়োর স্বপ্নে বিভোর হয় ঘুমিয়ে পড়লাম।...

January 13, 2018 · 4 min · সোয়াইব

এরিক ভিয়েনমায়ার: এক অদম্য অভিযাত্রী

অনেককেই বলতে শুনি, তারা পাহাড়ে যান মেঘের সিংহাসনে বসে নিচের পৃথিবীর সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে। কিন্তু একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী? সে কেন পাহাড়ে যায়? তার দু চোখে তো তুলোর মত উড়ে যাওয়া মেঘ কিংবা ঐ শুভ্র সাদা তুষার চূড়া কিছুই ভাসে না। হাওয়াদের দ্বারা ভারি কুয়াশাদের ঝেটিয়ে নিয়ে যাওয়া, রাত ফুরোনোর আগেই শুরু হয়ে যাওয়া আলোর নাটক এসব কিছুই তার চোখে ধরা দেয় না। পৃথিবী জুড়ে তার শুধুই অন্ধকার। তবুও কেন সে পর্বতারোহন করে?...

January 12, 2018 · 11 min · সোয়াইব

জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ১

সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারীনি’ প্রথম পড়েছিলাম ২০১৩ তে। তখন শুধু দার্জিলিং নামটাই পরিচিত ছিল। তাও ভাসাভাসা। কিন্তু ঘুম, সান্দাকফু, ফালুট, চ্যাংথাপু এ আবার কি! ‘ঘুম’! এ কেমন নাম? এখানকার মানুষরা কি সারাদিন ঘুমিয়েই থাকে বলে এমন নাম। ফালুটই বা কেমন? ফেলুদার সাথে কোনভাবে সম্পর্কিত নাকি? সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া কিশোর মনে উৎসাহের কোন কমতি নেই। কিন্তু তখন তো আর এত বড় বড় ট্রাভেল কমিউনিটির সাথে সংযুক্ত ছিলাম না, এতো দুর্গম কোন যায়গায় যে মানুষ ভ্রমনে যেতে পারে সে বিষয়েও কোন ধারনা ছিল না। তাই গুগল ঘেটেঘুটে যেটুকু জানতে পারলাম সেই নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল। ‘ঘুম’ পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেল স্টেশন যেখানে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয় ট্রেনে করে যেতে হয়, পথে দেখা হয় ৩৬০ ডিগ্রী মোড় নেয়া বাতাসিয়া লুপের সাথে। আবার সান্দাকফু!...

January 12, 2018 · 5 min · সোয়াইব