জহির রায়হানঃমজুপুর থেকে মিরপুর
“প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে এক ফোঁটা অশ্রুও হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি,হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে,তাই। মৃত্যুর খবর আসে। মরা মানুষ দেখি। মৃতদেহ কবরে নামাই।পরক্ষণে ভুলে যাই।রাইফেলটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট টিলাটার ওপরে এসে দাঁড়াই।সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে।কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আর একটা গ্রাম। খবর এসেছে ওখানে ঘাঁটি পেতেছে ওরা। একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল। একসঙ্গে থেকেছি। শুয়েছি। খেয়েছি। ঘুমিয়েছি। এক টেবিলে বসে গল্প করেছি। প্রয়োজনবোধে ঝগড়া করেছি। ভালবেসেছি। আজ তাদের দেখলে শরীর রক্ত গরম হয়ে যায়।চোখ জ্বালা করে ওঠে। হাত নিশপিশ করে। পাগলের মতো গুলি ছুঁড়ি। মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। একজনকে মারতে পারলে উল্লাসে ফেটে পড়ি।ঘৃণায় থুতু ছিটোই মৃতদেহের মুখে।“এভাবেই ‘সময়ের প্রয়োজনে'র মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো লোকটার সাথে। এই লোকটার বইগুলো পড়তে ইচ্ছা করেনা। একদমই না। পড়তে শুরু করলেই মনে হয় কে জানি বুকটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। পুরোটা লেখনীজুড়ে কিভাবে যেন আবেগের ব্যাবচ্ছেদ করে যান নির্লিপ্ততার সাথে। ৪৫ বছর কেটে গেলেও এখনও মনে হয় ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নের ক্ষণজন্মা মানুষটি এখনও বেঁচে আছেন। একদিন অন্তর্ধান থেকে বেড়িয়ে এসে লিখবেন আরও একটি ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ কিংবা ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। এসব ভাবতে গেলেই ভীষণ যন্ত্রনা হয়। অথচ ভাবতেই আমি ভালোবাসি।...