পর্বতারোহণ একটা নেশা, তীব্র নেশা। যার উৎপত্তি, অনুভূতি, আর উপসংহার-যে পর্বতারোহণ করে সে ছাড়া অন্য কেউ কখনও জানতে পারে না। ১৯৭০ সালে যে রেইনহোল্ড মেসনার নাঙ্গা পর্বতের তৎকালীন সম্পূর্ণ অপরিচিত রুট ডায়ামির ফেস থেকে মৃত্যু সাথে করে নেমেছিলেন; বলেছিলেন, ‘এই অভিযানে আমি আমার জীবন ছাড়া বাকি সবকিছু হারিয়েছি। এটাই বোধহয় আমার পর্বতারোহণ জীবনের পরিসমাপ্তি।’ সেই মেসনারই ১৯৭৮ সালে আবার ফিরে গেছেন নাঙ্গা পর্বতে। সোলো ক্লাইম্বিং করে পৌঁছেছেন চূড়ায়। কিসের নেশায়? কিসের নেশায় মৃত্যুকে সাথে নিয়ে ছুটে চলেছেন এক পর্বত থেকে আরেক পর্বতে?

হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত অনুজ গুনথার। ডেথজোনের সেই ৭৯০০ মিটারে, যেখানে কেউ কারো নয়, যেখানে সহযাত্রী পিটার আর ফেলিক্সরাও মুখ ফিরিয়ে নেয় নিজের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে। কিন্তু সকল বাঁধা বিপত্তিকে ঠেলে সম্পূর্ণ অপরিচিত, কঠিনতম রুট ধরে নেমে আসতে শুরু করলেন তারা। ভয়ংকর তুষারধ্বসে করুণ পরিণতি জুটল গুনথারের ভাগ্যে। তারপর? এই বইটি মূলত রেইনহোল্ড মেসনার ও তার ভাই গুনথারের করুণ পরিণতির প্রতিচ্ছবি। রেইনহোল্ড আর গুনথারের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জুটির রসায়ন বর্ণনায় ভরপুর এই বই।

মেসনার তার ছোট ভাইয়ের অদম্য সাহস আর প্রবল ইচ্ছা শক্তির বর্ণনা দিয়েছেন। অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বর্ণনা দিয়েছেন প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি পরিকল্পনার। অভিযানের অধিনায়কের পক্ষপাতদুষ্ট ভুল সিদ্ধান্তেরও ব্যবচ্ছেদ করেছেন নির্বিকারভাবে। ডায়ামির ভ্যালীর সেই অপরিচিত জনপদের মানুষের সহযোগিতার সাথে তিক্ততার অনুভূতিও প্রকাশ করেছেন ব্যথিত হৃদয়ে। তাদের দুই ভাইয়ের ডায়েরীর পাতা, ব্যক্তিগত চিঠি, সহযাত্রীদের মন্তব্য আর প্রয়োজনীয় তথ্য-ছবির সংগ্রহ বইটিকে করে তুলেছে আরও চিত্তাকর্ষক। কিন্তু বইয়ের সারবস্তু যে ট্রাজেডি তার প্রতিফলন ঘটে মেসনারের মন্তব্যে, (যখন তিনি হ্যালুসিনেশনে ভুগছিলেন) ‘

যখন আমি হাঁটছিলাম আমি আমার মা কে দেখতে পাচ্ছি। তিনি রান্নাঘরে, আমার ভাই বাগানে। তারপর আবার আমার মা। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু গুনথার? সে কি শুধু অদৃশ্য হয়ে গেল? না, এটা কখনই হতে পারে না।’

বই সম্পর্কিত তথ্যাবলীঃ

নাম: দ্য ন্যাকেড মাউন্টেন

লেখক: রেইনহোল্ড মেসনার

প্রকাশনী: দ্য ক্রোউড প্রেস লিমিটেড, ইউ কে

প্রকাশকাল: ২০ জুন, ২০০৫