ঠান্ডা হাওয়া যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য রুমের শেষ ছিদ্রটিও বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম। সেজন্যই হয়তো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়। তখনও বাইরে ঘন কুয়াশার মশারিটা টাঙানো। আকাশে প্রায় পূর্ণ চাঁদ কিন্তু তবুও হোটেলের সামনের রাস্তাটুকুও দেখা যাচ্ছে না ঘন কুয়াশায়। সেই কুয়াশার উপরে চাঁদের হলদে আলো পড়ে পৃথিবীটা যেন অপার্থিব হয়ে উঠেছে। শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার এই জোসনা দেখলে কি বলতেন এসব ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছি।

ভোর থেকেই রাতের কুয়াশার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ঘন মেঘ। আকাশটা কালো হয়ে আছে। আকাশটা পরিষ্কার থাকলে এই টুমলিং থেকেই দেখা মিলতো কাঞ্চজঙ্ঘার। কিন্তু এমন মেঘে ঢাকা সেটা চিন্তা করাও যেন পাপ। তাই মন খারাপ করেই বিছানায় পড়ে রইলাম আরও ঘন্টাখানেক। সকাল ৭ টা বাজতে চলল এখন পর্যন্ত সূর্যের কোন দেখাই নেই। একটু আগের মেঘগুলোও কালো হয়ে এসেছে। কাঠ কয়লার মত কালো মেঘ আকাশটাকে পুরোপুরি ঢেকে রেখেছে। খুব তেড়ে বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে আজ ট্রেকিং এর কি হবে ভেবে পাইনা। আজকের মাঝে যদি কালাপোখারি পৌঁছাতে না পারি তবে বুদ্ধ পূর্ণিমায় আর ঘুমন্ত বুদ্ধের সাথে কাটানো সম্ভব হবে না।

তার সাথে আরও যোগ হয়েছে বাতাস। দূরে হিমালয়ের কোলে হয়ত বৃষ্টি হচ্ছে কোথাও। সেই বৃষ্টির কনাগুলোই যেন বাতাস বয়ে নিয়ে এসে শীতটাকে আরও ঝাকিয়ে তুলেছে। এমন হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় কম্বলের নিচ থেকে বের হতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হলো। ফ্রেশ হতে গিয়ে মুখে পানি লাগাতেই মনে হলো কেউ যেন ধারালো ব্লেড দিয়ে মুখটাকে কুচি কুচি করে কাটছে। ভোর সাড়ে সাতটার মাঝেই ব্যাগ প্যাক করে সবাইকে নিয়ে নিচে নেমে আসলাম। বৃষ্টি হলে হবে তাই বলে শুরুতেই হাল ছেড়ে দেবার কোন মানেই হয় না। আমাদের সাথে আসা বাকি গ্রুপগুলো আরও আগেও রওনা হয়ে গিয়েছে। ডিম, রুটি আর পাপড় দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে রওনা দিলাম আটটার দিকে। উদ্দেশ্য আপাতত কালাপোখারি পৌঁছানো।

কালাপোখারি পৌঁছানোর জন্য গৈরিবাস পর্যন্ত মোটামুটি নিচের দিকে নামতে হবে। এরপর গৈরীবাস থেকেই খাড়া পাহাড় বেয়ে পৌছাতে হবে কালিয়াকাটরা। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে কালাপোখারি। এই হলো আজকের প্লান। টুমলিং থেকে রওনা দিয়ে সামান্য উপরে উঠে একবার পিছনে ফিরে তাকালাম স্মৃতির ফ্রেমটাকে আরও একবার এঁকে নিতে। সামনে বিরাট বিরাট পাহাড়গুলো লালচে ধূসর চাদর গায়ে জড়িয়ে গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে। ধ্যানগম্ভীর শব্দটার মানে সহজেই বোঝা যায় ওদের দিকে তাকালে। পা বাড়ালাম সেই ধ্যানমগ্ন পাহাড়ের দিকেই।

খুব বেশী খাড়াই নেই। শুধু নিচের দিকে চলা। এই যে নিচের দিকে নামছি এই পথই আবার উপরে উঠতে হবে মনে হলেই মনের মাঝে হু হু করে ওঠে। হাটছি সিমেন্ট আর পাথর বাঁধানো জীপে চলার রাস্তা দিয়ে। খানিক পর পরই জীপ চলে যাচ্ছে পাশ ঘেষে। হাত জানিয়ে জানিয়ে যাচ্ছে অভিবাদন। আরও কিছুটা সামনে আগাতে ঘন জঙ্গল শুরু। সূর্যের আলো উপরের ঘনত্ব পেরিয়ে বোধহয় নিচে পৌছাতে পারে না। চারপাশে একটা স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ। শ্যাওলা স্যাঁতস্যাঁতে পাথরগুলোর উপর যেন জেঁকে বসেছে। কোন কৃত্রিমতার ছোঁয়াটুকু নেই। এমনকি রাস্তার পাশের যে পড় ডাস্টবিন যেটা ভর্তি হয়ে আছে পর্যটকদের ক্ষাণিকের সুখ দেয়া হরেক রকমের মদের বোতলে সেই ডাস্টবিনটায়ও শ্যাওলা এমন ভাবে লেগে আছে দেখে বোঝার উপায় নেই যে মানুষের হাতের তৈরী। প্রথম দেখাতেই মনে হবে যেন বিশাল কোন পাথরের চাঁই পড়ে আছে।

আরও কিছুটা আগাতে রডোডেনড্রন আর ক্যামেলিয়ায় অপরূপা হয়ে গেল পৃথিবীটা। আমাদের সাথের ৩ জন গাইড সহ সামনে চলে গেছে। আমি অপার হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে পিছিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি। হঠাৎই নিজেকে আবিষ্কার করলাম সম্পূর্ণ একা। নির্জন পথের বামপাশে পাহাড় আর ডানে খাড়া ঢাল। তাকিয়ে থাকলে নেশা ধরে যায় চোখে। আরও ক্ষাণিকটা সামনে এগোতেই চোখে পড়ল ঘন সরু গাছের সারি যেন নিজ হাতে কেউ রোপন করেছে শখের বাগান বিলাসের নেশায়।

চলার পথে হঠাৎই আকাশটা যেন মাথার উপরে অনেকটা নেমে এসেছে। পায়েরতলার মাটি যেন অনেক উঁচুতে এমন একটা অনুভুতি হচ্ছিলো হাটতে হাটতে। এখানে পাকা রাস্তা করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু সামান্য ছোট ঝরণা গুলোর গায়ে সামান্য আঁচড়ও দেয়া হয়নি। তাদের চলার পথে পড়ে নেই একটিও কৃত্রিমতা। ইতিমধ্যে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগাতেই পা দুখানা যেন প্রতিবাদ জানিয়ে উঠলো আরও তাড়াতাড়ি চলতে। গৈরিবাস না পৌছাতে পারলে বৃষ্টি থেকে মাথাটা আর বাচানো যাবে না কিছুতেই। তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে আগেই কিনে রাখা পলিথিনটা পেঁচিয়ে নিলাম শরীরে। এরপর দ্বিগুন উৎসাহে শুরু করলাম পথচলা।

আরও মিনিট ত্রিশেক হাটার পরে চোখে পড়ল গৈরীবাসের ‘জিটিএ লজ।’ আমাদের গাইড ইয়োগেন আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অপেক্ষায়। কি জ্বালা! এখানেও আবার পাসপোর্ট এন্ট্রি করাতে হবে। বিরক্তিকর। কিন্তু কিছুই করার নেই। পাসপোর্ট এন্ট্রি করাতে করাতেই এদিককার সাতকাহন। প্রথমেই এসে অভিযোগ তুলল ইয়োগেন। গত একদিনে সে নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছে কার সাথে কথা বলতে হবে। বৃত্তান্ত জানতে চাইলে জানালো গ্রুপের কয়েকজন তার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। তার অপরাধ সে নাকি আমাদের ভুল ও কম রোমাঞ্চকর পথে নিয়ে এসেছে। এরচেয়ে আমাদের সাথে যে অন্য গ্রুপগুলো যাত্রা করেছিলো তাদের কাছ থেকে শুনেই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বাকিরা।

শীত মানুষকে চিরকালই নিস্তব্ধ করে দেয়। আমাকেও দিয়েছিলো। পৃথিবীর এতো উপরে এসে এসব সামান্য বিষয় নিয়ে কথা বাড়াতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না মোটেই। তাছাড়া গ্রুপের বাকি সবাই আনাড়ী। পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে এতোদিনে এটুকু শিখে গিয়েছি যে পাহাড়ের মানুষগুলো কতটা সহজ সরল হয়। আমাদের মত সমতলের মানুষের মত এত জটিলতা তারা বুঝে না। তাছাড়া তাদের মনে আঘাত দেবার কিংবা রাগানোর ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। যেটা এবারেও দেখলাম হাতে নাতেই। ইয়োগেনসহ বাকিদেরও শান্ত করতে খুব বেশী বেগ পেতে হলো না।

গৈরীবাস থেকে পাহড়টা খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে। কেউ যেন তুলি দিয়ে রাস্তা এঁকে দিয়েছে সেই পাহাড়ের বুকে। মিনিট বিশেক যাত্রা বিরতির পর আবার হাটা শুরু করলাম। গেটেই একটা বিশাল বোর্ডে এই ট্রেকে পাওয়া যায় যে এগারোটি রডোডেনড্রনের প্রজাতি তাদের সবার নাম আর সায়েন্টিফিক নাম দেয়া আছে। এদের মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দ লাল রং এর রডোডেনড্রন বা “Rhododendron ferrugineum” দেখলে মনে হয় ধূসর পাথরের উপর যেন কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। কিছুটা কৃষ্ণচূড়ায় ঢাকা পথের মত। তবে আরও বেশী মায়াবী, আরও বেশী পবিত্র, আরও বেশী সুন্দর। পা দিয়ে মাড়াতে ইচ্ছে করে না।

হাটছি না বলে উঠছি পাহাড় বেয়ে বলাটাই বেশী যুক্তিযুক্ত হবে। এরি মধ্যে ইয়োগেনও তার পূর্বের মনঃক্ষুন্নতার ঝাঝটা মেটালো। যেহেতু আগেরবার পাহাড়ের উপর থেকে নিয়ে না আসার জন্য কথা শুনতে হয়েছে তাকে তাই এবার সে সেই শোধটাই তুলল। পাহাড়ের উপর থেকে নিয়ে গেল যা বেয়ে উঠতে মোটামুটি সবারই অন্নপ্রাসন্নের ভাত বের হয়ে যাবার যোগাড়। কেউ কোন টু শব্দটিও করছে না। নীরবে হেটে যাচ্ছি সবাই। কষ্ট হয়েও বেশ উপভোগ করছিলাম এই শোধ-প্রতিশোধের খেলাটা। একটা শিক্ষা হওয়া উচিত। সামনে আরও অনেক পথ বাকি। এরই মধ্যে এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলার মাসুলটা গোনা বিফলে যাবে না নিশ্চয়ই। বড় কোন ভুলের হাত থেকেই বাঁচাবে বরঞ্চ।

দুপাশে ঘন জঙ্গল তারই মাঝ দিয়ে সাপের মত সরু পথ দিয়ে হেটে চলেছি সবাই। এতোটাই সরু যে পাশাপাশি দুইজন হাটবার উপায় নেই। এভাবেই পেড়িয়ে গেলো প্রায় আধাঘন্টার মত। ততক্ষণে সবাই হাপিয়ে উঠেছি। সামনেই আর একটা বাঁক। এটা পেরোলেই এই চড়াই কিছুটা কমবে।ইয়োগেন সবাইকে বাঁকটা ঘুরে উপরে আসতে বলে নিজে পাথর বেয়ে উপরে উঠে গেল। এ বাকিরা চলে গেলেও আমার পক্ষে এ লোভ সামলানো দায় হয়ে পড়ল। ঝাপিয়ে পড়লাম পাথরের উপর। ইয়োগেনই শিখিয়ে দিলো কি করে কোন পাথরের উপর পা ফেলতে হবে। অনেকক্ষণের ঝাপটা-ঝাপটির পর অবশেষে উপরে উঠে আসলাম। খুব বেশী কিছু না। মাত্র ৩০-৩৫ ফুটের মত হবে। তাও জীবনে এই প্রথম রক ক্লাইম্বিং এর স্বাদ পেয়ে উদ্যোম যেন আরও বেড়ে গেলো। সামনে আরও কত রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে কে জানে।

প্রতিটি বাঁক যেন অষ্টাদশী তরুণীর নির্লিপ্ত চাহনি যার আঙুলের ইশারায় সাদা দাঁড়ির মত খুচরো মেঘও রোশনাই ছড়িয়ে যায় নাগরিক জীবন থেকে বহুদূরে, অন্য এক পৃথিবীতে। সেই পৃথিবীর বুকে যেন হাজার বছর ধরে হেটে চলেছি। ঘড়িতে সময় চলতে, সারাদিন কিছু পড়েনি পেটে। অসম্ভব দুর্বল মনে হচ্ছিলো নিজেকে। সামনের পাহাড়ের প্রাচীর যেন পৃথীর শেষ প্রান্তে চলে গেছে। আরও ঘন্টা খানেক সেই প্রাচীর ঘেষে হেটে পৌছে গেলাম কালিয়াকাটরা। ২-৩ তিনটি ছোট্ট বাড়ি। আভিজাত্যের সামান্যতমও ছোঁয়া নেই তবু যেন কত অপরূপা। দেখলে হিংসে লাগে। এখানেই সারতে হবে দুপুরের খাবার।

ট্রেকিং এর সময় ভারী খাবার খাওয়াটা আমার কাছে বরাবরই বোকামী লাগে। যতটুকুই খাবো নিজের শরীরের সাথে সেই খাবারের ওজন টুকুও বয়ে বেড়াতে হবে। তাই চাওমিন আর স্যুপ দিয়েই দুপুরের খাওয়া সেরে সামনের আঙিনায় বসে মেঘের লুকোচুড়ি দেখলাম আরও কিছুক্ষণ। আকাশের মন এখনও খারাপ। এখনও ঘোলাটে পর্দাটা টাঙানো। তবুও অপেক্ষার প্রহর গুনছি রং দেখার আশায়। আবার শুরু হলো যাত্রা। এবারা খাড়াই কিছুটা কম। ঘন জঙ্গলও নেই। শুধু বামপাশের খাড়া পাহাড় আর বাপাশের খাদ গুলোই আগের মত আছে। ঢালাই দেয়া রাস্তা সেই গৈরীবাসেই শেষ হয়ে গেছে এখানে শুধু পাথরের চাঁই ফেলে রাস্তা করা।

রডোডেনড্রন আর ক্যামেলিয়া ভূপৃষ্ঠ থেকে এই বারোহাজার ফুট উপরে উৎসব বসিয়েছে। এরই মাঝে আকাশের মধ্যে হেটে যাওয়া চমৎকার লাগছিলো। ইতিমধ্যে সূর্য্যিমামা পশ্চিমে হেলে পড়তে শুরু করেছে অনেকটা। অদ্ভুত এক মায়াবী আলো নেমে এসেছে পৃথিবীতে। মনে-প্রাণে এক অদ্ভুত বিষন্নতা ভর করেছে। বিষন্ন শব্দটার শুরুতে যদিও ‘বিষ’ তবু তাতে কেন জানি জ্বালা হয় না যদি বিষন্নতা ভর করে এমনও পরিবেশে। এ আলোয় মন আরও বিষন্ন করে দিতে মন চায়। দূর পাহাড়ে মেঘ আর আলোর লুকোচুড়ি দেখে হাঁটতে হাঁটতে এমনটাই মনে হচ্ছিলো। পাহাড়ের প্রাচীর ঘেষে হাটতে হাটতে দূর পাহাড়ের খাঁজগুলো সেই ভালোলাগাটা যেন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলো বহুগুণে। আরও প্রায় ঘন্টাখানেক হাটার পর পাহাড়ের প্রাচীরটাকে দুটুকরো অবস্থায় দেখলাম। যেন ইংরেজী ‘ভি’ অক্ষরের মত কেউ পাহাড়ের একটা অংশ তুলে নিয়েছে। সামনেই একটা বাঁক।

বাঁকটা ঘুরতেই চোখের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেলো সীমের বিচির মত ছোট্ট একটা লেক। এটাই কালাপোখারি। ‘পোখারি’ শব্দের অর্থ লেক বা জলাশয়। মিচমিচে কালো পানির একটা লেক, উপরে শোভা পাচ্ছে রং বেরং এর ‘প্রেয়ার ফ্লাগ।’ কিনারাজুড়ে থরে সাজানো আছে পাথররাশি। কত শত মানুষ যে তার ইচ্ছে পূরণের আশায় এমন ‘Rock Cairn’ সাজিয়ে রেখেছে তার ইয়ত্তা নেই। আমিও বাদ যাইনি। ছোট্ট একটা পাথরের ডিবি বানিয়ে বিড়িবিড় করে তৎক্ষনাত মনে পড়া ইচ্ছেগুলো বলেই ফেললাম। একটু সামনেই কালাপোখারি গ্রাম।

দূর থেকে দেখা যায় কুড়েঘরের মত কয়েকটা ছোট্ট ঘর। বাড়িঘরগুলোয় স্বাচ্ছদ্যের চিহ্নমাত্র নেই। স্তিমিত চোখ মেলে তারা দাঁড়িয়ে আছে দূরে। সেখানে কোন মানুষজন আছে বলে মনে হয় না। যারা আছে তাদের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছিলো না। শীত মানুষকে চিরকালই নিস্তব্ধ করে দেয়। শেষ্পথটুকু বেশ উদ্যমের সাথেই শেষ করলাম। গিয়ে উঠলাম ইয়োগেনের পরিচিত এক দিদির লজে। লজ বললে ভুল বলা হবে। নিজেদেরই আবাস, তারই মাঝে একটি ঘরে ছয়টি খাট ফেলে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত দুইদিনে বেশ মানিয়ে নিয়েছি। আজ এসেই গতকালের মত হাঁপিয়ে পড়িনি। তাও ব্যাগপত্র রেখে, ফ্রেশ হয়ে, সামান্য বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। সারাদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসলাম পৃথিবীর অনেক উঁচুতে দাঁড়িয়ে দিনের শেষ আলোটুকু মিলিয়ে যেতে দেখার প্রত্যাশায়।


জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৯