মানেভাঞ্জনের সকালটা শুরু হয় বেশ আগেই। সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়ে শেষ রাতের দিকে ভালোই ঘুম হয়েছে। তাও সকাল ৬ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেছে। সহযাত্রীরা তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। পৃথিবীর শেষ স্তব্ধতা যেখানে অনন্তর শান্তি মেলানো, পাগল হয়ে যেতে হয় যার রূপে, সারা জীবন অপলক কাটিয়ে দেয়া যায় যার দিকে তাকিয়ে সেই রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘার নেশা কি আর বিছানায় থাকতে দিবে? মোটা কম্বলেরর নিচ থেকেই শীতটাকে ঝেড়ে ফেলে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়ার ধার না ঘেঁষেই ছুটলাম গাইড আর সিঙ্গালীলা ফরেস্টে প্রবেশের টিকেটের খোজে। এছাড়া গতকাল রাতে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু কেনাকাটাও বাদ পড়ে গিয়েছিল। সেগুলোও কিনতে হবে। আর কিছু না হোক একজোড়া হাতমোজা তো লাগবেই। এখানেই যে ঠান্ডা আরও উপরে গেলে কি হয় কে জানে!

হোটেলের বাইরে বেরিয়েই দেখি একটা সাজ সাজ রব। চারপাশে কুয়াশার একটা জাল টাঙানো পুরো উপত্যকাজুড়ে। সাথে একটা হালকা হিম হিম ভাব। তাও রাস্তায় বেশ মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। বেশিরভাগই টুরিস্ট। স্থানীয়দের সংখ্যাও কম নয়। প্রায় সব দোকানপাটই খুলে বসেছে এর মধ্যেই। হোটেল থেকে বেড়িয়ে ডানদিকের মানে গতকাল যে রাস্তা ধরে এসেছিলাম সেদিকে মিনিট দুয়েক হাটলেই গাইড এসোসিয়েশনের অফিস। তার ঠিক সামনেই পাসপোর্ট এন্ট্রির অফিস। প্রথমেই গেলাম সেখানে। সামনে দুইজন এসএসবি কর্মকর্তা বসে আছেন। পাসপোর্ট এন্ট্রির কথা জানাতেই বলল আগে গাইড ঠিক করে আসতে। ততক্ষনে তারা সব ঠিক করে রাখছে। সুবোধ বালকের মত ঢুকলাম গাইড এসোসিয়েশনের অফিসে।

ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে আসা একটা দল তাদের গাইড নিয়ে নিয়েছে। এখানে খুব বেশি সময় লাগলো না। শুধুমাত্র কতদিনের জন্য গাইড লাগবে আর কোথায় কি করতে হবে বুঝিয়ে দিল। এরপর গাইডসমেত বেড়িয়ে আসলাম। আমাদের গাইডের নাম ‘ইয়োগেন’। পঁচিশ কি ত্রিশ বছর বয়সের নেপালি। ছিপছিপে শরীরের গঠন দেখে মনে হয় এর জন্মই হয়েছে পাহাড়ে দৌঁড়ানোর জন্য। আমাকে দেখেই বোধহয় বুঝতে পেরেছিল যে বাঙালী। বাইরে বেড়িয়ে প্রথম পরিষ্কার বাংলায় বলল, “আমি ইয়োগেন।” আমি রীতিমত অবাক। এতেটাও আশা করিনি। এতো দূরে এসে বাংলা শুনতে পাবো। শুনেছিলাম এখানে ভরসা করতে হবে হিন্দী আর ইংরজীর উপরেই। পরে বুঝেছিলাম তারাও বাধ্য হয়ে নিজেদের তাগিদেই বাংলা শিখেছে। বেশ খুশিই হলাম। গাইড বাংলা বোঝে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে। মাতৃভাষায় পুরো ট্রেকে সবকিছুর বর্নণা পেলে আর কি চাই!

তখনও পাসপোর্ট এন্ট্রির অফিসে বড় কর্মকর্তা আসেনি। কি আর করা! কেনাকাটা যা বাকি ছিল সেগুলোই সেরে নিলাম। আরও কিছুক্ষন অপেক্ষার পরে কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পাওয়া গেল। আমাদের ৬ জনের পাসপোর্ট দিতেই প্রায় পনের মিনিট বসে সব এন্ট্রি করে নিলেন ইয়া বড় রেজিস্ট্রার খাতায়। এরপর ভদ্রতার খাতিরেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, “May I pay for it?” ভদ্রলোক বোধহয় আকাশ থেকে পড়লেন আমার কথায়। বললেন, “No no, it’s just a formality. Nothing else.” মুগ্ধই হতে হয় এমন কিছু মানুষের ব্যবহারে। আমাদের দেশে সরকারী অফিসগুলোতে যেখানে একটা ‘অটোগ্রাফ’ও বিনে পয়সায় মিলে না সেখানে এরা? যাইহোক ইয়োগেনকে তার বাসায় ব্যাগ আনতে পাঠিয়ে নিজে হোটেলে ফিরে এলাম।

হোটেলে ফিরে দেখি সবাই প্রাকৃতিক কাজ সেরে সেলফির আসর বসিয়েছে। জীবনদা তার আর স্ত্রীকে কোন কাজই করতে দিচ্ছে না। সকাল আটটা বেজে গেছে এরই মধ্যে। তাড়া দিলাম সবাইকে। রাতেই সব ব্যাগ গোছগাছ করা ছিল। মানেভাঞ্জনের তাপমাত্রও বাড়তে শুরু করেছে। ট্রেকিং শুরু করলে ঘেমে যাবো ভেবে মোটা জামাকাপড়গুলো ব্যাগপ্যাকের বাইরে ঝুলিয়ে নিলাম অবস্থা খারাপ বুঝলে যাতে করে সহজেই পড়ে ফেলতে পারি। এখানে সকালের খাবার খেতে গেলে দেরী হয়ে যাবে। তাই সে চিন্তা চিত্রে গিয়ে করা যাবে ভেবে শেষবারের মত সবকিছু চেক করে জীবনদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চললাম কাঙ্খিত সেই স্বপ্নযাত্রায়, পাহাড়ের বুকে রডোডেনড্রনের গালিচা বিছিয়ে যে পথ নিজেকে সাজিয়ে রেখেছে আমার জন্য।

সিঙ্গালীলা ফরেস্টের প্রবেশদ্বারটা হোটেল এক্সোটিকার ঠিক পরেই। আর তার সামনেই টিকেট কাউন্টার। তারপরেই খাড়া পিচঢালা রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের বুক চিরে। এ দৃশ্যটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রনা দেয়। পাহাড় তার স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে স্বগর্বে আর কিছু বিলাসী মানুষ নিজেদের ভ্রমন তৃষ্ণা মেটাতে তার বুক চিরে বইয়ে দিয়েছে কৃত্রিমতার ছোঁয়া। তবুও নিজেকে শান্ত করি এই ভেবে যে এখানে শুধু আমরাই না। অনেকগুলো গ্রাম রয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের বাস। যাদের জীবিকার তাগিদে যেতে হয় নগরে। নিজেদের কথা ভাবলেই কি চলে। যারা এই দুর্গম পাহড়ের সাথে নিজেদের বেঁধে নিয়েছে তাদের জন্য হলেও তো দরকার। চেকপোস্টের সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসবই যখন ভাবছিলাম ততক্ষনে বাকিরা গিয়ে টিকেট কেটে আনলো।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এবার স্বপ্ন যাত্রার পালা। চারিপাশে মেঘের কোন চিহ্ন নেই। সিঙ্গালীলা ফরেস্টের চেকপোষ্টটা যখন পার করে খাড়া পিচঢালা রাস্তা শুরু হলো মনের মাঝে তখন বয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত এক শিহরন। দুপাশে ঘন পাইন গাছের সারি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে রোদের প্রতাপ নেই। ঘন ছায়াও নেই। সূর্য্যি মামার সাথে সাথে তাপমাত্রাটাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। আকাশটা ক্লিওপেট্রার চোখের মত নীল। সামান্য হেটেই ঘামতে শুরু করেছি। এতটা হাই অল্টিচুডে এই প্রথম ট্রেকিং করছি। তাই হয়তো বেশ অল্পতেই হাপিয়ে উঠছি।

মানেভাঞ্জন থেকে যতই সামনে আগাচ্ছি ততই নির্জতা বাড়ছে। জীপগুলো সাঁই সাঁই করে উঠে যাচ্ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। দেখলেই কেমন জানি গা গুলিয়ে ওঠে। এই পীচঢালার কৃত্রিমতা ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না। গাইড ইয়োগেনকে জিজ্ঞেস করলাম ভিন্ন কোন রাস্তা আছে কিনা। নিরাশ করে দিয়ে ইয়োগেন জানালো আর কোন রাস্তা নেই। তবে পাহাড়ের উপর দিয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়া যায়। সে রাস্তাই ধরলাম। একটু বেশি খাড়া তবে কৃত্রিমতা বর্জিত। এখানে নির্জনতা আরও বেশী। গা ছমছমে একটা পরিবেশ। যতটা আগাচ্ছিলাম তার থেকে বেশী বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। দলের বাকিরা সামনে এগিয়ে গেলেও আমি ইয়োগেনের সাথে গল্প করতে করতে সামনে এগোচ্ছিলাম। ইয়োগেন শেখাচ্ছে কি করে অল্প অক্সিজেনের স্বদ্বব্যবহার করতে হয়। খুব বেশী তাড়াহুড়ো না করে ছোটছোট করে পদক্ষেপে আগানোই বুদ্ধিমানের কাজ, উচ্চতা যেখানে প্রশ্ন।

চারপাশের নীল আকাশ আর সবুজের মাঝে বিচরন আমার। কত কি যে ভাবছি আবোল তাবোল। হাটছি আপনমনে। হটাতই ভাবনার সূতো ছিড়লো ইয়োগেনের ডাকে। ডেকে বলল, ওই যে দূরে সাদাশে একটা আভা দেখা যাচ্ছে ওটাই কাঞ্চনজঙ্ঘা। আরে তাইতো। খুব স্পস্ট না হলেও বেশ বোঝা যাচ্ছে ঘুমন্ত বুদ্ধকে। মুখটা তার কুম্ভকর্ণ, পেটটা কাঞ্চনজঙ্ঘা। আচ্ছা তাহলে পা কি? উত্তর দিলো ইয়োগেনই। পায়ের কাছে অনেকগুলো চূড়ো আছে। তবে সবচেয়ে উঁচু চূড়োটা পান্দিম। পা থেকেই পান্দিম। এতো তাড়াতাড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখে পেয়ে শরীরের উদ্যোম যেন দ্বিগুন হয়ে গেল। ঘন্টাখানেকের মাঝেই পৌছে গেলাম ছবির মত সুন্দর গ্রাম চিত্রে।

সকাল থেকে পেটেও দানাপানি কিছুই পড়েনি। দূর থেকে মনেস্ট্রী দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম সামনেই কোন লোকালয় আছে খুব সম্ববত। চিত্রে যেন এক রূপকথা। সবুজ সমতল। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়ানো বিস্তীর্ন উঁচু পাহাড়। আমাদের আগেই আরও কয়েকটা টিম পৌছে গিয়েছে চিত্রে। খাবারের অর্ডার করলাম ডিম আর রুটি। জানালার পাশে বসে খেতে খেতে দেখছি দূর আকাশের ময়ূর নীলিমা। আর প্রার্থনা করছি আকাশটার এই রূপ যেন সান্দাকফু পর্যন্ত থাকে। খাওয়ার পর্ব শেষ করে সামান্য বিশ্রাম নিতে নিয়ে গো ধরলাম আমি ওই রাস্তা ধরে যাবো না। পাহাড়ের উপর দিয়ে যাবো। বাকিরাও সম্মতি জানালো।

আমাদের সাথে সাথেই রওনা দিলো আরও একটি দল। ঠিক দল বলা ঠিক হবে না। এখানকারই একটা পরিবার। ফালুটের পথে এদের ঘর। সামান্য পরিচয়েই বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। সবচেয়ে অবাক লাগলো আজকে তারা নাকি সান্দাকফু গিয়ে থাকবে আর কাল দুপুরের আগেই নিজেদের আবাসে পৌছে যাবে। এও কি সম্ভব? ব্যাখ্যা দিলো ইয়োগেন এসে। এখানে শীতকালে একটা ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করা হয়। গতবছর ম্যারাথনে যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে মানেভাঞ্জন থেকে সান্দাকফু পৌছাতে সময় নিয়েছে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা। তার চেয়েও বড় কথা হলো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উত্তরখন্ডের একটা ‘মেয়ে’। এ বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা আমার। আমি অবাক হয়ে রূপকথা শুনি।

সবকিছু বেশ ভালোমতই আগাচ্ছিলো। বাঁধ সাধল বিরক্তিকর মেঘ। চিত্রের পরের গ্রাম লামাধুরা। লামাধুরার সামান্য কিছু আগেই মেঘে ঢেকে গেল চারপাশ। সেইসাথে একটা হিমহিম ভাব সমস্ত উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে দিল। বিরক্তিকর, অবাধ্য মেঘ। লামাধুরার‍্য থামার কোন মানেই নেই। এখনও পথ বেশো বাকি। এরপরের গন্তব্য ছবিতে আঁকা আর একটি সুন্দর গ্রাম মেঘমা। সেখানেই দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা যাবে। লামাধুরায় না থেমেই মেঘকে সঙ্গী করেই চললাম মেঘমার পথে। এখানকার রাস্তাটা পীচঢালা না। বরং বেশ পাথুরে। একপাশে খাড়া ঢাল অন্যপাশে পাথুরে পাহাড়। মাঝে মাঝে দু একটা জীপগাড়ির আওয়াজ ছাড়া আর কোন সাড়াশব্দ দেই। নির্জনতা যেন এখানে আকাশে ছড়ানো। এতোক্ষনের হাপিয়ে ওঠাটা এখন কিছুটা মানিয়ে গেছে শরীরের সাথে। অতটা কষ্ট হচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু একটা রডোডেনড্রনের গাছ চোখে পড়লেও সেগুলোতে ফুল খুব বেশী নেই। এখানকার প্রকৃতি একটু বেশিই রুক্ষ। ঠিক যেন চিত্রের মত না।

আরও খানিকটা এগিয়েই একটা চেকপোষ্ট। এখানে আবার পাসপোর্ট এন্ট্রি করাতে হবে। এটাই মেঘমার প্রবেশধার। এতোক্ষণ হাটার কারণেই বোধহয় টের পাইনি। যেই মূহুর্তে থামলাম ততক্ষনে কনকনে একটা ঠান্ডা হাওয়া এসে সমস্ত শরীর অবশ করে দিয়ে গেল। চটপট করে হাফপ্যান্ট থেকে ফুলপ্যান্টের ভেররে সেধে গেলাম। গায়েও চাপিয়ে নিলাম জ্যাকেট। চেকপোষ্টের পেছনেই ঢালে আর্মি ক্যাম্প। তার একটু সামনেই রঙ বে রঙ এর বাহারী ফুল দিয়ে সাজানো রঙিন একটা কটেজ। এখানেই খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। “ট্রেকিং এর সময় ভারী খাবার খেতে নেই” ইয়োগেনের এমন উপদেশেই নুডুলস দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেললাম। সময় আছে হাতে। আজকের গন্তব্য টুমলিং পর্যন্ত। এরপরেই টংলু ভ্যালী আর তার পরেই টুমিলিং। নেপালের একটু ছোট্ট সুন্দর গ্রাম টুমলিং।

দশ পনের মিনিটের বিশ্রামেই শরীর আবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো। কিন্তু হাড় কাপানো ঠান্ডাটা আর গেলো না। মেঘমা থেকে দুই দিকে দুইটি রাস্তা চলে গেছে। সোজা পাথুরে রাস্তাটা টংলুর দিকে। আর বামদিকের কাচা রাস্তাটা শর্টকাটে টংলু না হয়েই টুমলিং পৌছানোর জন্য। টংলু ভ্যালীর এত গল্প শুনেছি যে আশা করেছিলাম টংলু হয়েই টুমলিং পৌছাবো। কিন্তু রাস্তার কাজ চলছে। এই পথ ধরা ঠিক হবে না। তাই অগত্যা বা দিকের পথটাই ধরতে হলো। বেশ ঢালু কাচা রাস্তা। সোজা নিচে নেমে গেছে। এই জিনিসটাই সবচেয়ে বেশী বিরক্তিকর। পৃথীর এতো উপরে এসে আর নিচেই নামতে ইচ্ছে করেনা। তাছাড়া নিচে নামলে আবার উপরে উঠতে হবে। সেটাও কম পরিশ্রমের নয়। আপনমনে গুনগুন করে ডেনভাবের “Rocky Mountain High” গাইছি আর

হাটছি। আর দূর দিগন্তে মেঘ সূর্যের চুকোচুড়ি অবলোকন করছি। টংলুর রাস্তায় কাজ চলার কারনে জীপগুলোও এই কাচা রাস্তা ধরেই চলেছি। বেশ ভয়ংকর। একবার একটু চাকা এদিক ওদিক হয়েও এ জিনমের মত ভবলীলা সাঙ্গ। জীপে বসা মানুষগুলো কি করে যে এই তীব্র ঝাঁকুনি সহ্য করে চলেছে কে জানে! আমি বাবা এই বেশ আছি। নিজের পা দুখানার জন্য বেশ গর্ব হচ্ছিলো। কারণ জীপে যারাই যাচ্ছে তারাই হাত তুলে শুভকামনা জানিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছি বেশ অনেকটা পথ। টুমলিং এখনও দেখা যাচ্ছে না। আরও প্রায় ত্রিশ মিনিটের পথ দূরে আছি, চারপাশের দৃশ্যমান সবগুলো পাহাড়ের নিচে। এই পাহাড় আবার বেয়ে উঠতে হবে। তবে দেখা মিলবে টুমলিং এর। শেষ পথটুকু ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে পৌছে যাই। কিন্তু পাহাড় এতোটাও সদয় না। হাত পা একটু একটু টান টান করতে শুরু করেছে। আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছে ইংরেজ এক সোলো ট্রাভেলার। তার সাথে গল্প করতে করতেই এগোচ্ছিলাম। সন্ধ্যার পরে গল্প হবে আশ্বাস দিয়ে ইংরেজ ব্যাটাও জোর পায়ে হেটে গেলো। একটা বাঁক ঘুরেই দূরে চোখে পড়ল একটা বাংলোর মত। ওটাই টুমিলিং, আজকের রাত ওখানেই কাটবে। এই টুমলিং এরও কম গল্প শুনিনি পথে। কতই না সুন্দর! জানিনা কি অপেক্ষা করছে। ধীর পায়ে এগোচ্ছি মেঘ শরীরে।


জয়িতার খোঁজেঃ সান্দাকফু-ফালুট – ৭