মানুষ বাঁচাই

নগরের এই শহুরে শরীরে উৎসব গামী কিংবা উৎসব ফেরত মানুষের শব্দের মিছিল। কত শব্দ, কত কোলাহল, কত উন্মাদনা। এত কিছুর ভীড়েও নিরবে, নিঃশব্দে শরীরটাকে নিজের রিক্সায় এলিয়ে দিয়েছেন জালাল মিয়া। কি আর করবেন! সারাদিন পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রযন্ত্রের বোঝা বইতে বইতে যে বড্ড ক্লান্ত তিনি, বড্ড পরিশ্রান্ত। রাত আড়াইটে। হাসপাতালের সিসিইউ’র বাইরে লোহার শক্ত চেয়ারে বসে থাকতে কোমড় শক্ত হয়ে গেছে। একটু হাঁটাচলার জন্য বাইরে দেখতে পাই জালাল মিয়াকে। নিজের রিক্সার হুডে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে ঘুমাচ্ছেন। সামনে পড়ে আছে গোবর ও ডাস্টবিনের ময়লা। সেই তীব্র ঝাঝালো গন্ধের মাঝেও ঘুমাচ্ছেন অঘোরে।...

May 1, 2019 · 3 min · সোয়াইব

প্রযত্নে অবন্তিকা

বসুন্ধরা, ঢাকা ১লা বৈশাখ, ১৪২৬ প্রিয় অবন্তীকা, তোর মনে হতে পারে প্রিয় বলে প্রথমেই ভুল করে ফেললাম। যে মানুষ নিজের সন্তানকে গর্ভে নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে, সে আর যাই হোক প্রিয় হতে পারে না। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তুই সেই প্রিয় স্থানটিই দখন করে বসে আছিস। কারণ আর কেউ না জানুক আমি তো জানি জীবনের কি করুণ পরিহাস তোকে সেই নরককুণ্ডে নিয়ে ফেলেছিলো। তাইতো বিশ্বাস করি তুই আত্মহত্যা করিসনি, তোকে খুন করা হয়েছে। আর তোর খুনীদের তালিকা করতে দিলে আমি নিজের নামটাও সেই তালিকায় রাখতে চাই। হ্যাঁ, আমিও তোকে খুন করেছি। খুন করেছি সেদিন যেদিন তুই বলেছিলি, ‘অভ্র, তুই কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছিস?...

April 14, 2019 · 5 min · সোয়াইব

মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান পরিষ্কার

‘মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার’-শিরোনামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যক শাহাদুজ্জামানের একটি ছোট গল্প রয়েছে। গল্পের বক্তব্য এমন- গল্পের চরিত্র পলাশের বাবা মৃত্যুশয্যায়। তাকে রাখা হয়েছে আইসিইউ-তে, লাইফ সাপোর্টে। চেতনা বলতে পলাশ প্রতিদিন বাবার কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, বাবা আমি পলাশ, চিনতে পারছেন। মৃত্যুপথযাত্রী বাবা সামান্য ঘাড় নাড়েন। এইটুকুই। ডাক্তার বলতে পারছেন না তিনি বাঁচবেন কিনা। বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর এই ঘাড় নাড়াটুকুর মূল্য প্রতিদিন চল্লিশ হাজার টাকা। এভাবে হয়ত সে এক সপ্তাহ সার্ভাইভ করতে পারেন। আবার এক মাসও সার্ভাইভ করতে পারেন। প্রতিদিনকার এই বিপুল অঙ্কের টাকার যোগান দিতে দিতে পলাশ হয়তো নিঃস্ব হয়ে যাবে। কিন্তু দ্বায়িত্ববোধ, সামাজিকতা, নৈতিকতা আর মায়ার জাল ছিঁড়ে সে বের হতে পারে না। তার মনে পড়ে যায় বাবার সাথে তার ছেলেবেলার কথা। সেসব তাকে স্মৃতিকাতর করে দেয়। তাই সে বাধ্য হয়েই এই নিঃস্ব হবার পথ ধরেছে।...

April 10, 2019 · 5 min · সোয়াইব

নিষ্ঠুরতার ভালোবাসা

শরীরটা এখনো ভালো না। থেকে থেকেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠছে। চার দেয়ালের রুমটা ছেড়ে বের হয়েছি অনেকদিন পরে। অনেকদিনের ঘরবন্দী মানুষ হটাত বের হয়ে আকাশ দেখলে আকাশের বিশালতা তার ভালো লাগে। সে বিশাল নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কি কি যেন ভাবতে পারে আনমনে। টং এ বসলাম চা খেতে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। গত ছয় বছরে আপন বলতে এই চা আর সিগারেট। অনেকে ছেড়ে গেছে অনেককে ছেড়েছি, শুধু ছাড়তে পারিনি এই দুই জিনিস। পাশেই রাস্তায় ছুটে চলছে অনেক মানুষ। রিকশায় কিছু কপোত-কপোতি হুড তুলে মুখ লুকিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোও যেন কিছু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তারা এভাবেই যাবে যেন আমি জানতাম।...

March 29, 2019 · 3 min · সোয়াইব

পাহাড়ী প্যাঁচাল

পরিচিত অনেককেই আমি মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন করি- ‘এমন একটা জিনিসের নাম বলো যেটা ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না’। বেশিরভাগের উত্তর থাকে- ঘুরতে যাওয়া। কারণ তাদের ধারণা আমি আমার ভবঘুরে জীবনটাকেই অনেক বেশি পছন্দ করি। আসলেও তাই। কিন্তু তাই বলে এমন নয় যে ভ্রমন ছাড়া আমি বাঁচতেই পারবো না। সত্যি বলতে কি আমি কখনো ঘুরতেই যাই না। বজ্রাহত হওয়ার মত অবস্থা তাই না? কি ডাহা মিথ্যা কথাটাই না বলছি। কিন্তু এখন আমি আসলেই ঘুরতে যাই না। এক সময় যেতাম। তখন বন্ধুদের নিয়ে আজ সুন্দরবন, কাল বান্দরবন, পরশু সাজেক। কিন্তু একটা সময় বিষন্নতাই হোক, হতাশাই হোক কিংবা প্রকৃতির নিয়মই হোক- জীবন দর্শনটা পুরোপুরি বদলে গেল।...

March 21, 2019 · 4 min · সোয়াইব

পরিচালক ঋত্বিক ঘটক

ঋত্বিক ঘটক- বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য কিংবদন্তি। সমস্তজীবন জুড়ে প্রচারবিমুখ, ডার্টব্যাক এই মানুষটার সাথে তুলনা করা যায় না কাউকেই। দুনিয়াজোড়া খ্যাতির শিখরে পৌঁছানো সত্যজিৎ রায়কেও ঋত্বিক ঘটকের সামনে নেহাৎ মাঝারিই মনে হয়। রাশিয়ার তারাকোভস্কির মত তিনিও হাতে গোনা কয়েকটি ছবির সূত্র ধরে হয়ে উঠেছেন আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রের নির্বিকার অংশ। ঋত্বিকের ছবির পুরোটাই ছিলো গোটা দুনিয়ার মানুষের সংগ্রামকে বাংলা ভাষার চিত্রে ছোট জীবনের ক্যানভাসে তুলে ধরা। তার চরিত্রসমূহের লড়াই যেন সমগ্র দুনিয়ার নিপিড়ীত মানুষের মহোত্তম সংগ্রাম। তিনি বিশ্বাস করতেন নির্যাতিত-নিপিড়ীত মানুষের জীবনকে ক্যানভাসে তুলে ধরার জন্য চাই কাছ থেকে তাদের জীবনকে অনুধাবন করা। তাই তিনি ঘুরর বেড়িয়েছেন বস্তিতে বস্তিতে, ভাত খেয়েছেন নদীর মাঝি মল্লাদের সাথে। তবুও যেন নিজেকে যথাযথ প্রকাশ করতে পারার বেদনায় ছটফট করছেন নিজের ভেতরে। তিনি সবসময় বলতেন-...

March 12, 2019 · 4 min · সোয়াইব

ভালোবাসা দিবস

রাত্রি দ্বিপ্রহর। যান্ত্রিক এই নগরের অধিকাংশ মানুষ সারাদিন বসন্ত উৎসবের আমেজে মেতে ক্লান্তি আর অবসাদে ঘুমিয়ে। রাস্তার সোডিয়াম বাতির মৃদু আলোতে দু’ একটা কুকুর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। মৃত্যুর মত নীরবতা। ঠিক তখনই প্রিয় মানুষটা আইসিইউ-তে, লাইফ সাপোর্টে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে পরিবারের সকল সদস্যরা। কমবেশি সবাই বৃদ্ধের স্বাভাবিক মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। বয়সতো আর কম হলো না! কিন্তু তখনও শিয়রে বসে থাকা বৃদ্ধা স্ত্রী হার্টবিটটা কখন থেমে যায়, স্ক্রিনে মিটিমিটি করে লাফাতে থাকা লাইনটা কখন সরল রেখায় পরিণত হয় সেই আতংকে চোখ মুছছেন বারংবার। বৃদ্ধ স্বামীর স্বাভাবিক মৃত্যুটাও যেন আরেকটু দীর্ঘায়িত হয় তার প্রার্থনা করে যাচ্ছেন প্রতি নিঃশ্বাসে।...

February 13, 2019 · 3 min · সোয়াইব

রুপকুন্ডের রুপ ও একটি হিমালয়ান উপাখ্যান-২

পরদিন ঘুম ভাঙলো একটু বেলা করেই। আজকেই রওনা হয়ে যাবো। বুকজুড়ে অদ্ভুত এক ব্যথা, কাব্যিক এক অনুভূতি, অজানা সেই পথ চলা। দূর আকাশে কল্পনাতে আঁকা প্রেয়সীর মুখ আর অপরিসীম প্রতীক্ষার প্রহর। তবুও সময় হাতের তালু দিয়ে অলক্ষ্যে ঝড়ে যায় বালুর মতন। অপেক্ষা করে বসে থাকলেই চলবে না। সুদীপ্ত-অমৃতা যেহেতু নতুন, ওদের জন্য তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগসহ বেশ কিছু কেনাকাটা করতে হবে। তাছাড়া আমাদের সবারই কিছু না কিছু কিনতে হবে। আর এসবের জন্য ডিক্যাথলনের পরিপূরক কিছু নেই। কলকাতায় ডিক্যাথনের যে শোরুম আছে সেটাও বেশ দূরে। ট্রেন রাত সাড়ে আটটায়, টিকেট পাবো সন্ধ্যা ছয়টায়। আর আগে গিয়ে আসতে হবে।...

December 30, 2018 · 12 min · সোয়াইব

দিকভ্রান্ত হিমু

- চাকরী-বাকরী কিছু করো? - না, আঙ্কেল। - হুম, সেটাই ধারনা করেছিলাম। - জ্বী, আঙ্কেল। - তাহলে জীবন চলছে কি করে? - খেয়ে আর ঘুমিয়ে, আঙ্কেল। - অসাধারণ! তবে তো তোমার জীবনে অনেক ব্যস্ততা। এর মাঝে প্রেম করার সময় হয় কি করে? - সময় হয়না তো, আঙ্কেল। এই নিয়েই তো ঝগড়া লেগেই থাকে। এই তো কাল রাতেও ঝগড়া হলো, আঙ্কেল। - ঝগড়া করার সময় হয়? - জ্বী, আঙ্কেল, তা হয়।...

December 3, 2018 · 3 min · সোয়াইব

অসামাজিক

এই গ্রহটা, এই শহরটা অনেক বেশী স্বার্থপর। এখানে প্রতি মূহুর্তে আপনাকে শুধু দেখাতে হবে, ‘শো অফ’ করতে হবে। আপনি যতক্ষন না হাঁকিয়ে বেড়াবেন, দেখিয়ে বেড়াবেন আপনার নীরব পরিশ্রমের মূল্য কেউ ততদিন দিবে না। আপনাকে প্রতি মূহুর্তে আশপাশের মানুষকে ধাক্কা দিয়ে বুঝাতে হবে আপনি তার জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন। প্রতিটা নিঃশ্বাসে জানান দিতে হবে আপনি তার সকল দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিয়েছেন। বাস্তবিক পক্ষে নিয়েছেন কিনা সেটা এখানে মূখ্য বিষয় নয়। এখানে অন্তর্মূখীতার কোন স্থান নেই। আপনার অন্তর্মূখীতার ঋন আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে- ক্ষয়ে-ক্ষয়ে, সয়ে-সয়ে।...

October 22, 2018 · 2 min · সোয়াইব