“- মা কেমন আছেন? - ভালো আছি বাবা। তুমি কোথা থেকে আসছ? - ঢাকা থেকে। কতদিন ধরে আছেন এখানে? - তা প্রায় ২-৩ বছর হবে। - এখানে কে রেখে গেছে? ছেলে নাকি ছেলের বউ? - না বাবা, ও তো চাকরী থেকে কোয়ার্টার পেয়েছে। অনেক ছোট। তাই আমি নিজে থেকেই চলে আসছি। - এখানে কষ্ট হয় না থাকতে? - না বাবা। একটুও না।”
মা গুলো বড্ড বেশি মিথ্যেবাদী হয়। টলটলে চোখ দুটি বলছে সব সহ্য করবে কিন্তু সন্তানের অসম্মান না।
সারারাত জেগে ছিলাম। প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসে তাই করি। ইচ্ছে ছিল এবারেও “অদম্য পথযাত্রা” ইভেন্টে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে ফুল দিয়ে আসব। কিন্তু এই ফুল-শ্রদ্ধা নাটক আর ভালো লাগছিল না। সেই তো এক আলোচনা সভা। আর কিছুক্ষন ইতিহাস কপচিয়ে পুরোনো সেই রাজনৈতিক কেচ্ছা-কাহীনি। এসব আর ঠিক জমছিল না। ভোর ৫ টার দিকে মনে হল সারাটা দিন সেইসব মানুষগুলোর সাথে কাটালে কেমন হয় যারা স্বধীন দেশেও পরাধীন। গুগল করে বের করলাম “বিশিয়া বৃদ্ধাশ্রম”। সকাল ৬ টায় ছুটলাম গাজীপুরে। অনেক খুজে শেষ পর্যন্ত বের করলাম। কিন্তু বিধিবাম। এখানেও নাটক। প্রবেশ করতে দিবে না, ছবি তুলতে দিবে না, কথাও বলা যাবে না। তাও অনেক অনুরোধের পর প্রবেশ অনুমতি মিলল।
ইচ্ছে ছিল সারাদিন আমাদের-তোমাদের মত কিছু সামাজিক জানোয়ার জন্ম দেয়া বাবা-মাদের সাথে থাকব, কাছ থেকে দেখব, গল্প শুনব। কিন্তু সময় বেঁধে দিল। সে যাইহোক, তাদের বাঁধা সময়েই শুনলাম গল্প। কারো ছেলে নতুন বিয়ে করেছে, বউ চোখে দেখতে পারে না মাকে। উপায়? বৃদ্ধাশ্রম। এমন হাজারো গল্প রয়েছে এদের। তারপরেও অশ্রু টলমল চোখে দোয়া করে যাচ্ছেন ছেলে-মেয়ে যেন ভাল থাকে, সুখে থাকে। এখানে মোট বাবা-মায়ের সংখ্যা ৭০০-৭৫০। তার মানে সমাজে এখনও ৭০০ অধিক কুলাঙ্গার আছে। আমি খুনি হতে চাই।