- চাকরী-বাকরী কিছু করো?
- না, আঙ্কেল।
- হুম, সেটাই ধারনা করেছিলাম।
- জ্বী, আঙ্কেল।
- তাহলে জীবন চলছে কি করে?
- খেয়ে আর ঘুমিয়ে, আঙ্কেল।
- অসাধারণ! তবে তো তোমার জীবনে অনেক ব্যস্ততা। এর মাঝে প্রেম করার সময় হয় কি করে?
- সময় হয়না তো, আঙ্কেল। এই নিয়েই তো ঝগড়া লেগেই থাকে। এই তো কাল রাতেও ঝগড়া হলো, আঙ্কেল।
- ঝগড়া করার সময় হয়?
- জ্বী, আঙ্কেল, তা হয়।
- বুঝলাম। তা ওর সাথে পরিচয়টা কিভাবে হলো?
- টিফিনের সব টাকা জমিয়ে আবেগ কিনিতাম, আঙ্কেল।
- মানে? স্কুল থোকেই?
- না, আঙ্কেল।
- কলেজে?
- জ্বী না, আঙ্কেল।
- তাহলে?
- মেগাবাইট কিনিতাম। মানে ফেসবুকে, আঙ্কেল।
- ফাইজলামি করছো আমার সাথে?
- ছিঃ, আঙ্কেল।
- কথায় কথায় আঙ্কেল বলাটা কি মুদ্রাদোষ?
- না আঙ্কেল। নার্ভাসনেস।
- কি নিয়ে নার্ভাস?
- আপনি যদি ফেসবুক আইডি চেয়ে বসেন তা নিয়ে খানিকটা দুঃশ্চিন্তায় আছি।
- কেন? কি আছে ফেসবুক আইডিতে?
- কিছুনা, আঙ্কেল।
- আবার জিজ্ঞেস করছি কি আছে?
- ছবি, আঙ্কেল।
- কিসের ছবি?
- পাহাড়ের আঙ্কেল।
- কেন? পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াও নাকি?
- জ্বী, আঙ্কেল।
- কেন? সন্ন্যাসী হবার ইচ্ছা আছে নাকি?
- তা একটু আছে আঙ্কেল।
- বেশ। স্বভাব চরিত্রের সাথে মিল আছে। তা ভবিষ্যতের জন্য কি ভাবছো?
- ঠিক করেছি হিমালয়ে চলে যাবো। সেখানে দোতালা একটা বাড়ি বানাবো। উপরের তলায় নিজে থাকবো আর নিচতলায় খামার করব, আঙ্কেল।
- কি করবা? খামার! কিসের?
- ছাগল আঙ্কেলের। স্যরি, মানে, ছাগলের আঙ্কেল।
- বুঝেছি। মানিকে মানিক চিনেছে। আমার মাদী ছাগলটা ঠিকই রামছাগল চিনে ধরে এনেছে।
- জ্বী আংকেল?
- ভাগ হারামজাদা, ভাগ এখান থেকে। গেট আউট রাইট নাউ! মোখলেস! মোখলেস!!
মোখলেসের হাতে অর্ধচন্দ্র খাবার আগেই অবন্তিকাদের সেগুনবাগিচার প্রসাদপ্রতুল বাড়ির গেটের বাইরে এসে নামলাম। বাইরে প্রচন্ড রোদ। পিচগলা গরম। গরমে ঝলসে যাওয়া রাস্তায় একটা সিগারেট চেপে ধরলে কি জ্বলে উঠতে পারে? পরীক্ষা করার জন্য পকেটে হাত দিতে গিয়েই মনে পড়লো সিগারেট তো নেই। হিমু হওয়ার জন্য তো পকেট ছাড়া পাঞ্জাবী পড়া শুরু করেছি। আচ্ছা, হিমু কি সিগারেট খায়?
কাকরাইল রোড ধরে হাটতে হাটতে অবন্তিকার কথাই ভাবছি। ইচ্ছে করেই এমনটা করেছি আমি। মেয়েটাকে আমি ভালোবাসি না। মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। সন্দেহ হয় যদিও। সারাক্ষণ ঝগড়া-ফাসাদ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না সে। এটাও হিমু হওয়ার নিমিত্তই বলা যায়। জাগতিক যত মায়ার বাঁধনে বাঁধতে গিয়েও ছুটে আসতে পারলেই তো মহাপুরুষ হতে পারবো। যদিও প্রেম করতে গিয়ে বেশ বুঝতে পারছি আমার ভালোবাসার ক্ষমতাই দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ওকে আমি বুঝাতে চেষ্টা করি- আমি আসলে বেশ ভাবুক ধরনের ছেলে। কি হবে প্রেম করে, একদিন তো সব ছেড়ে পাহাড়েই চলে যাবো। কিন্তু মেয়েটা কিভাবে যেন বুঝে ফেলেছে আমি আসলে মোটেই ভাবুক টাবুক নই। পুরোটাই আমার ভেক।
তবে আমিও দমবার পাত্র নই। আজকের এই ঘটনাটাও নিজেকে ভাবুক প্রমাণের আরেকটি প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে। কিন্তু ভাবুক হতে হলে হিমু হতে হয়। যদিও সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছি, তবে সবসময় হিমু হওয়া যায় না। সমস্যা আছে। সময় বুঝে পায়ে জুতোও গলাতে হয়। যেমন এই যে এখন, এই রোদে খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটলে মানুষজন আমাকে হিমু বলবে না। আঙ্কেলের মতো বলবে, রামছাগল। আবার হিমুর মত এখন রমনা থানায় গিয়ে ওসি সাহেবকে যদি বলি, বাসায় গিয়ে দেখেন বাসায় আপনার স্ত্রীর প্রাক্তন প্রমিকা বেড়াতে এসেছে, সে রামছাগল বলার পরিবর্তে রামপ্যাদানি দিবে।
যাই হোক, হিমু সেজে ভাবুক ভাবুক ভাব ধরার মধ্যে এক ধরণের মাদকতা আছে। মানুষ ভাবে ছেলেটা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। কিন্তু তাতে সমস্যাও আছে। হিমু হতে হলে কোনো মেয়েকে ভালোবাসা যায় না। বিশেষ করে, কোনো ঝগড়াটে মেয়েকে তো মোটেই না। এই যে কাণ্ড করলাম, তা নিয়েও ঝগড়া হবে। কিন্তু সে ঝগড়াও বেশিক্ষণ করা যাবে না। আমি হিমু ধরণের ছেলে তো, হিমুদের বেশিক্ষণ ঝগড়া করা মানায় না।
মাঝেমাঝে ভাবি, হিমু টিমু বাদ দেই। কত কিছু করা যায় না। ঝগড়া করা যায় না, ভালোবাসা যায় না। হিমু হওয়া অনেক কঠিন। প্রেমিক হওয়া কঠিন না…
ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।