এই বিষন্ন সুন্দর শহরটা আমাকে কখনোই আলাদা করে মনে রাখবে না। এই শহর, শহরের শতাব্দী প্রাচীন বাড়িঘর, উঁচু নিচু পথঘাট, ভাঙাচোরা সোভিয়েত আর্কিটেকচার, আদিম সর্পিনী সহোদরার মত ছড়িযে থাকা ট্রাম লাইন; সমস্তকিছুই আমার প্রস্থানের সাথে সাথে আমাকে ভুলে যাবে। এই শহরটা যে অনেক বেশি স্বার্থপর; আমার থেকে, তোমার থেকে, তোমাদের থেকেও।

তবু এই স্টেশনটা আমাকে মনে রাখবে দীর্ঘকাল। ওর সাথে যে সখ্যতা গড়ে উঠেছে আমার। উৎসব ফেরত মানুষগুলোর কোলাহল থেমে যায় এখানে এসে। তারা প্রিয়-অপ্রিয় মানুষের জন্য ঘরে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। রাত সাড়ে এগারোটার শেষ ট্রামটাও ছেড়ে যায়। তবু আমরা ঠায় দাড়িয়ে থাকি। দুটো মাতাল পাশের বেঞ্চিটার উপর বসে তীব্র কণ্ঠে কিছু বলে। আমরা দুজনের কেউই কিছু বুঝতে পারি না। যেমনটা আমাদের কথা বুঝে না কেউ। আমাদের না বলা হাজারও কবিতা হেমন্তের ঘুর্ণি বাতাসে ঝরা পাতার মত উড়ে যায় শূণ্যে। কখনো আমাদের হৃদয় হিম করে দিয়ে তুষার পড়তে শুরু করে। শুভ্র তুষার কনা আমাদের বুকে সাকুরা ফুল হয়ে ঝরতে থাকে। এরপর বসন্ত আসে। আমাদের পাজরের হাড় ভেদ করে অবহেলায় বাড়তে শুরু করে কিছু বুনো ঘাসফুল। সেই সাথে বাড়তে শুরু করে রাত। একা ল্যাম্পপোস্ট প্রার্থনায় দাড়িয়ে থাকে আমাদের মাথার উপর, অসহায় মৃত হাজারো স্মৃতি-বিস্মৃতির নিরব সাক্ষী হয়ে..….