অনেকদিন পড়ি পড়ি করেও পড়া হচ্ছিল না। অবশেষে পড়ে ফেললাম কালজয়ী উপন্যাসটি। পড়ে কয়েক হাজার ভোল্টের শক খেলাম। সেই সাথে আফসোসও হচ্ছে এমন একটি বই এতোদিন ফেলে রেখেছিলাম বলে। মাত্র ঘন্টা দুয়েক সময় দিয়ে কেন আরও কিছুদিন আগে পড়লাম না।
কেন কাঁদছো লিলি? জীবনটা কি কারো অপেক্ষায় বসে থাকে? আমাদেরও একদিন মরতে হবে। তখনো পৃথিবীটা এমনি চলবে। চলা বন্ধ হবে না কোনদিন। যে শক্তি পৃথিবীকে চালিয়ে নিয়ে যায় তার কি কোনো শেষ আছে লিলি?
এ অনুচ্ছেদটিই লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন সমগ্র উপন্যাস জুড়ে।
পৃথিবীর এ চলার শক্তিই প্রত্যেকের জন্য একটি কবর খুড়ে রেখছে। মরে গলে পচে যাওয়া শরীর নয়, রক্ত-মাংস-হাড় নয়; বরং মুছে ফেলা অতীত আর উপড়ে ফেলা হৃদয় স্থান পায় সেখানে। এ কবরে আলো থেকেও আলো নেই, প্রাণ থেকেও প্রাণ নেই। আছে প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা, স্বপ্ন দেখার বিলাসীতা আর জীবনকে আকড়ে ধরা অন্ধকার। তেনমই একটি কবরে বসবাস একটি পরিবারের, কিছু নামের। মাহমুদ, মরিয়ম, হাসিনা, দুলু, খোকন, সালেহা বিবি, হাসমত আলী। এখানে আছে আশা, আছে স্বপ্ন, আছে নিম্নবিত্তের জীবন। কিশোরী প্রেমের সলজ্জ সাধ, আদর্শের লড়াই আছে।
পুরো পরিবাটাই যেন তাসের বানানো একখানা ঘর। আর প্রতিটা নামই যেন এক একটা তাস। তাস দিয়ে ঘর বানানো কঠিন। সাবধানে গড়তে হয় এ ঘর। কিন্তু ভাঙার জন্য একটি ফুঁ ই যথেষ্ট। আর সেখানে যদি পুরো ছাদটাই ভেঙে পড়ে তবে? ‘বরফ গলা নদী’ সেইসব তাসদের আখ্যান।
এই বইয়ে নিম্নবিত্তের সংগ্রাম আছে, দুঃখ-দৈন্য আছে, দশ টাকার জন্য মেয়ের জামাই-এর কাছে হাত পাতা আছে, ন্যায়-অন্যায়ের লড়াই আছে, আত্মমর্যাদার সীমাবদ্ধতা আছে।
হতবাক হয়ে পড়তে থাকি। দলা পাকিয়ে কান্না উঠে আসে। বইয়ের ভাঁজে মুখ লুকোই। ‘জহির রায়হান’ বলেই হয়তো এতো সাবলীল, এতো আবেগময়, মায়াময়, এতো অসাধারন
বই সম্পর্কিত তথ্যাবলীঃ
নামঃ বরফ গলা নদী
লেখকঃ জহির রায়হান
ঘরাণাঃ চিরায়ত উপন্যাস
প্রকাশনীঃ অনুপম প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
মুদ্রিত মূল্যঃ ১২০ টাকা